হরতাল গুজরাটি শব্দ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী এর প্রবর্তন করেন। ১৯৪৮ সালে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ‘তমুদ্দিন মজলিস’ প্রথম হরতাল ডাকার পর থেকে এ দেশের রাজনীতিতে জেঁকে বসেছে চরম এ কর্মসূচি।

‘হর’ মানে সব জায়গায় আর ‘তাল’ মানে তালা। অর্থাৎ, হরতাল মানে হলো সর্বত্র তালা। আর অবরোধ হলো, রাজপথ, রেলপথ আর নৌপথ রুদ্ধ করা।

হরতালের সঙ্গে মানুষের সাড়া দেওয়ার একটি সম্পর্ক আছে। অর্থাৎ রাজনৈতিক বা অন্য কোনো সংগঠন হরতাল আহ্বান করবে। মানুষ তাতে সাড়া দিয়ে পরিবহন, দোকানপাট, অফিস-আদালত বন্ধ রাখবে। অন্যদিকে অবরোধে মানুষকে জানিয়ে দেওয়া হয় যে কর্মসূচি চলাকালে সড়ক, নৌ ও রেলপথ অবরোধ করে রাখা হবে। পরিবহন চলতে দেওয়া হবে না।

অবরোধে মানুষের সাড়া দেওয়া বা না দেওয়ার কিছু নেই, বরং কর্মসূচি পালনে মানুষকে বাধ্য করা হয়।

ধর্মঘটঃ দাবী-দাওয়া পূরাণার্থে কর্মীদের সংঘবদ্ধভাবে কাজ-কর্ম বন্ধকরণ।

গ্রিক উপাখ্যানে ইলিয়াড ও ওডেসিতে ট্রয় নগরী অবরোধের কথা আছে। ট্রয়ের যুবরাজ প্যারিস যখন গ্রিকদের স্পার্টার রাজা মেনেলাসের সুন্দরী স্ত্রী হেলেনকে অপহরণ করেন তখন প্রতিশোধ নিতে ট্রয় আক্রমণ করে গ্রিকরা। দশ বছর ধরে গ্রিকরা তাদের রাজা মেনেলাসের ভাই আগামেমননের নেতৃত্বে ট্রয় অবরোধ করে রাখার পর বীর একিলিস কাঠের ঘোড়ার ভেতরে থেকে কৌশলে ট্রয় নগরীর ভেতরে ঢুকে পড়েন। ধ্বংস হয় সে নগরী।

জেরুজালেম অবরোধের ঘটনা ঘটে ১১৮৭ সালের ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ২ অক্টোবর পর্যন্ত। মিসরের আইউবীয় সুলতান সালাদিন ওরফে সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে এই অবরোধ হয়। ওই সময় শহরের নাগরিকদের শহর থেকে বের হতে দিতে মুক্তিপণও আদায় করা হয়েছিল। বাংলাদেশে পাকিস্তান আমলে অবরোধের চেয়ে ঢের বেশি হরতাল হয়েছে। স্বাধীনতার পর এরশাদের আমলে কিছু অবরোধ হয়। আওয়ামী লীগও বিভিন্ন সময় অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে।