সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ দেশের চালু থাকা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোর মধ্যে সবার আগে শুরু হয়েছে। প্রতিবছর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এখানে সিএসই, ইইই,সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে ৬০টি করে আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করানো হয়।

১)প্রশ্ন : প্রশ্নের ধরন কেমন ? আর প্রতিটা প্রশ্নের কি সমাধান করে দেখাতে হয় ??

উত্তর : প্রশ্নের ধরন লিখিত কিন্তু রচনামুলক টাইপের না।পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিক্ষাগুলোতে প্রশ্নের উত্তরে অপশন থাকে কিন্তু এখানে কোন অপশন থাকে না(ইংরেজি ব্যতিত)। উত্তর জানা থাকলে শুধু উত্তর লিখলেই হবে, সমাধান করে দেখাতে হবে না।

২)প্রশ্ন : ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশ্ন কি সাস্টের মত অনেক কঠিন হয় ??

উত্তর : না… ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রশ্ন সাস্টের মত কঠিন হয় না।অন্যান্য পাবলিক বিশবিদ্যালয়ের মতই প্রশ্ন হয়।

৩)প্রশ্ন : বিগত সালের প্রশ্ন পাওয়া যায় কি না?? এবং সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য কোন গাইড আছে কি না ??

উত্তর :যেহেতু প্রশ্ন পত্রেই উত্তর লিখতে হয়( প্রতিটা প্রশ্নের নিচে নির্দিষ্ট পরিমান যায়গা দেয়া হয় ঐ প্রশ্নের উত্তর লিখার জন্য) তাই পরিক্ষা শেষে প্রশ্ন পত্র জমা নেয়া হয়। তাই বিগত সালের প্রশ্ন পাওয়া যায় না।আর শুধুমাত্র “ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ভর্তি গাইড” নামে বাজারে বিভিন্ন প্রকাশনীর গাইড আছে,তবে এগুলোতে বিগত সালের প্রশ্ন দেয়া নেই,শুধু নমুনা প্রশ্ন দেয়া আছে। এসব গাইড পড়ে প্রশ্ন কমন পাবেন কি না জানি না।

৪)প্রশ্ন : ভুল উত্তরের জন্য কোন মার্ক কাটা যাবে কি ??

উত্তর : না… ভুল উত্তরের জন্য কোন মার্ক কাটা যাবে না। এবং কোন পারসিয়াল মার্ক ও নেই।

৫)প্রশ্ন :কত পেলে চান্স পাবো ??

উত্তর : এই প্রশ্নের উত্তর দেয়া কঠিন। আপনি চান্স পাবেন কি পাবেন না সেটা পুরোটা নির্ভর করে আপনার প্রিপারেশনের উপর। ভালো প্রিপারেশন নিলে খারাপ GPA নিয়েও চান্স পাওয়া সম্ভব।তবে GPA ৩০(SSC*৩=১৫ এবং HSC*৩=১৫ মোট ৩০) এর মধ্যে সর্বনিম্ন ২৫+ থাকলে লিখিত পরিক্ষায় ১০০ তে ৫০+ পেলে চান্স হবে আশা করি। তবে কত সিরিয়ালে থাকবেন সেটা বলা কঠিন।

কারণ ১০০তে প্রাপ্ত স্কোর ৫০/৫২ কে ৭০তে কনভার্ট করলে হয় ৩৫/৩৭ এবং আপনার জিপিএ ২৬ থাকলে মোট স্কোর হবে টোটাল ৬১/৬২, এতে চান্স হবে বলা যায়।

৬)প্রশ্ন: কিভাবে প্রিপারেশন নিবো ??

উত্তর : ভালো প্রিপারেশনের জন্য ভালো পড়াশোনার বিকল্প নেই।ব্যাসিক খুব ভালো ভাবে ক্লিয়ার করতে হবে এবং সেই সাথে সকল পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিগত সালের প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করতে হবে। প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশ্ন ব্যাংক সমাধান করলে আরও ভালো।

৭)প্রশ্ন: পরিক্ষার সিট কোথায় পড়ে ??

উত্তর : এই প্রশ্ন যারা করেন তাঁরা মনে হয় সার্কুলার ভালো করে পড়েন না। হুদাই এসে গ্রুপে পোস্ট দেন। সার্কুলারে খুব ভালো করে বলা আছে ভর্তি পরিক্ষার সিট সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেই পড়ে।

৮)প্রশ্ন: সাস্টের সার্টিফিকেট এবং সেকের সার্টিফিকেটের মধ্যে পার্থক্য কি ??

উত্তর : সাস্টের সার্টিফিকেট এবং সেকের সার্টিফিকেটের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।সাস্টের সার্টিফিকেট এবং সেকের সার্টিফিকেট একদম সেম।বাংলাদেশের যে কোন পাবলিক ভার্সিটির সার্টিফিকেটে হলের নামের যায়গায় সেই স্টুডেন্ট যেই হলে থেকেছে সেই হলের নাম থাকে।

এই ক্ষেত্রে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের স্টুডেন্টের জন্য সাস্টের সার্টিফিকেটে হলের নামের যায়গায় শুধু সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ লিখা থাকবে। অন্য সকল বিষয় সেম।

৯)প্রশ্ন :ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে ? কি ধরনের ক্যালকুলেটর ?

উত্তর : হুম… যেহেতু লিখিত পরিক্ষা তাই ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে। কি ধরনের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করা যাবে তাঁর একটা ছবি গ্রুপে দেয়া আছে দেখে নিন ।

১০)প্রশ্ন : সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ঢাবির প্রযুক্তি ইউনিটের থেকে কেমন??

উত্তর : নিঃসন্দেহে সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ঢাবির প্রযুক্তি ইউনিটের থেকে অনেক ভালো । এর কারন হলো ঢাবির প্রযুক্তি ইউনিট(MEC,FEC,নিটার) এগুলা ঢাবির অধীনে হলেও এখানে ঢাবির স্যাররা ক্লাস নেন না।এর কারন ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ+ ফরিদপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ঢাকা থেকে অনেক দূরে । দিন গিয়ে দিন আসা সম্ভব না তাই সেখানে ঢাবির শিক্ষকরা ক্লাস নেন না বলেই চলে।

তবে সেক ক্যাম্পাস সাস্ট থেকে মাত্র ৩০ টাকা ভাড়া(৪০ মিনিটের রাস্তা) যার কারনে স্যাররা অনায়াসেই আমাদের ক্যাম্পাসে আসতে পারেন। আর প্রতিটা ব্যাচেই কম বেশি সাস্টের সম্মানিত শিক্ষকমণ্ডলী অনেক গুলা কোর্স নিচ্ছেন। ৩ ডিপার্টমেন্টে ১২টা ব্যাচ রানিং গড়ে প্রতি ব্যাচে ২ জন করে সাস্টের টিচার ক্লাস নিচ্ছেন।

১১)প্রশ্ন : সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে পড়াশোনার মান কেমন ? এবং ল্যাব ফ্যাসিলিটি কেমন ?

উত্তর : এখানে পড়াশোনার মান বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় কোন অংশে কম নয়। যেহেতু সাস্টের অধীনে এবং প্রতি সেমিস্টারেই সাস্টের টিচার ক্লাস নিচ্ছেন সেহেতু পড়াশোনার মান অনেক ভালো। ভালো মানের ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য যেই রকম ল্যাব দরকার সেই মানের ল্যাব প্রতিটা ডিপার্টমেন্টেই বিদ্যমান।

১২)প্রশ্ন : সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বিএসসি পাশ করে বুয়েটে এমএসসি করা যাবে কি ?? আর এখান থেকে পাশ করে স্কলারশিপ সহ বিদেশে উচ্চ শিক্ষার কোন সুযোগ আছে কি না ??

উত্তর : হুম এখান থেকে পাশ করে শুধু বুয়েট না, বাংলাদেশের যে কোন পাবলিক/ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি করা যাবে। অত্র কলেজ থেকে ৩য় ব্যাচের এক ভাই বুয়েটে এমএসসি করছেন। আর সাস্টে এমএসসি করার ক্ষেত্রে এখানকার স্টুডেন্ট এর জন্য অনেক শিথিলতা আছে।

এমন কি সাস্টে অনেক কোর্স আছে যেমন CCNA কোর্স (নেটওয়ার্কিং এর উপর), Web Development কোর্স(Web design and Database এর উপর) ইত্যাদি কোর্স গুলা সেকের স্টুডেন্ট খুব সহজেই করতে পারে। যেখানে সিলেটের অন্য প্রাইভেট ভার্সিটির স্টুডেন্ট রা এই সব কোর্স করতে ভর্তি পরিক্ষাসহ নানান ঝামেলা পার করতে হয়।

আর এখান থেক পাশ করে অনেক ভাইয়া বাহিরের দেশে স্কলারশিপ সহ উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করছেন। এখন পর্যন্ত ৮টি ব্যাচ বের হইছে এর মধ্যে গড়ে প্রতি ব্যাচ থেকে ৩-৪ জন উচ্চশিক্ষার জন্য দেশের বাহিরে গেছেন।

১৩)প্রশ্ন : এখান থেকে পাশ করে কি বিসিএস দেয়া যায় ??

উত্তর : এধরনের প্রশ্ন কিভাবে করেন আমার বুঝে আসে না । আরে ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রী পাশ করে বিসিএস দেয়া যায় আর সেখানে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বিসিএস দেয়া যায় যাবে না ?? আমার প্রশ্ন রইলো।

১৪)প্রশ্ন : সেশনজট আছে কি ??

উত্তর : এমনিতেই কোন সেশনজট নেই। এই যাবত পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্টান হতে ৮টি ব্যাচ পড়াশোনা শেষ করে বের হয়ে গেছে। এবং পরবর্তী ৪টি ব্যাচ পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে। তো বিগত ব্যাচ গুলার মধ্যে কোন কোন ব্যাচের সর্ব উচ্চ ৬ মাসের সেশনজট ছিলো তাও আবার সেই ব্যাচের ব্যক্তিগত কারনে। বর্তমানে ১১তম এবং ১২তম ব্যাচের কোন সেশন জট নেই।

১৫)প্রশ্ন :চাকরীর বাজারে এখানকার স্টুডেন্টরা কতটা সফল ??

উত্তর : এখান থেকে পাশ করে বড় ভাইয়া আপুরা বিভিন্ন সরকারি মন্ত্রনালয়ে/অধিদপ্তর/পরিদপ্তর, সরকারি বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান,আধা সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ১ম শ্রেনীর কর্মকর্তা হিসাবে সম্মানের সহিত জব করছেন এছাড়া সরকারি বিভিন্ন সেক্টরে, সরকারি/বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে, নামি-দামি দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সফটওয়্যার ফার্মে জব করছেন।

১৬)প্রশ্ন: পাবলিক ভার্সিটির অমুক ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্ট ভালো ?? নাকি সেকের অমুক ইঞ্জিনিয়ারিং সাব্জেক্ট ভালো??

উত্তর : পাবলিক ভার্সিটির সাথে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তুলনা দিলে হবে ?? নিঃসন্দেহে পাবলিক ভার্সিটির ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট ভালো হবে।তবে পিউর সাইন্সের চেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং এর মধ্যে ক্যারিয়ার গড়ার ভালো সুযোগ থাকে। তাই নিম্নমানের পাবলিক ভার্সিটির পিউর সাইন্সের চেয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ গুলোতে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া বেটার।

বিঃদ্রঃ : আরও কিছু জানার থাকলে আমাদের গ্রুপে জিজ্ঞেস করতে পারেন।

লেখকঃ সামির আদনান