ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের ছাত্র ছিলাম। অনার্সে ৩.৯৮ সিজিপিএ নিয়ে বিভাগে প্রথম হয়েছিলাম। পেয়েছি প্রধানমন্ত্রী স্বর্ণপদক ২০১৫ ও ডিনস অ্যাওয়ার্ড। স্নাতকোত্তরেও ৩.৯৬ সিজিপিএ নিয়ে প্রথম হয়েছিলাম।
স্কুলবেলা থেকেই ক্যাডার সার্ভিসের প্রতি দুর্বলতা ছিল। বাবাও এ বিষয়ে খুব উৎসাহ দিতেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিসিএসে আগ্রহ আরো বেড়েছে, বিশেষ করে পররাষ্ট্র ক্যাডারের প্রতি আকর্ষণটা বেশি ছিল। স্নাতক পর্যায়ে সারা বছর ক্লাস ল্যাব নিয়েই ব্যস্ত থাকতে হতো। তাই তখন বিসিএসের প্রস্তুতি নিতে পারিনি।
মাস্টার্সে পড়ার সময় বন্ধুদের দেখে আমিও বিসিএসের ফরম পূরণ করি। তখনো শিওর ছিলাম না, পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে পারব কি না। যখন মাস্টার্সের থিসিস জমা দিই, তখন প্রিলির বাকি মাত্র দুই মাস । সময় নষ্ট না করে পড়াশোনা শুরু করি। ম্যাথ ও ইংরেজির বেসিক ভালো ছিল। টিউশনি করানোর কারণে গণিত ও বিজ্ঞান চর্চার মধ্যেই ছিল।
দুই মাসের মধ্যে বাকি পড়াগুলো, যেমন সাধারণ জ্ঞান, বাংলা, ইংরেজি সাহিত্য শেষ করে ফেলি।
অনেকে বলত, যাদের একাডেমিক রেজাল্ট ভালো, তাদের বিসিএস হয় না। তাদের কথায় কান দিতাম না। নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিয়েছি। ভেবেছি, প্রিলি পাস না করলেও অন্তত কিছু অভিজ্ঞতা হবে। যখন দেখলাম প্রিলিমিনারিতে টিকে গেছি, তখন পুরোদমে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করলাম। ল্যাবে গবেষণা প্রকল্পের কাজ চলছিল, পাশাপাশি বিসিএসের প্রস্তুতি নিতাম।
ল্যাবের কাজের ফাঁকে ও রাতে বাসায় ফিরে লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়েছি। ল্যাবের সহকর্মীদের সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করতাম, যা লিখিত ও ভাইভায় অনেক কাজে দিয়েছে। ল্যাবের দুজন পিএইচডি গবেষক ডা. হুজ্জত উল্লাহ ও ডা. মো. আল-আমীন ছিলেন বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।
তাঁদের পরামর্শ ও উৎসাহ আমাকে বেশ সাহস জুগিয়েছে। যেদিন ল্যাব থাকত না, সেদিন সারা দিন পড়তাম।
প্রস্তুতিতে আমার বিশেষ কৌশল ছিল, টপিক ধরে ধরে টানা পড়তাম।
একটি বিষয়ের ওপর একাধিক সহায়ক ও রেফারেন্স বই অনুসরণ করতাম। প্রথমে পরিকল্পনা করে নিতাম, কতটুকু সময়ে কতটুকু পড়া শেষ করব। তারপর সেই অনুযায়ী পড়তাম। নিয়মিত পত্রিকা পড়তাম, বিশেষ কে অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক আর সম্পাদকীয় পাতা পড়তাম। একই খবর ইংরেজি পত্রিকা থেকে পড়ে নতুন নতুন ইংরেজি শব্দ রপ্ত রাখতাম।
সমসাময়িক বিষয়গুলোতে আপডেট থাকার চেষ্টা করতাম। লিখিত পরীক্ষার প্রস্তুতির সময় যেসব বিষয় ভালোভাবে লিখলে বেশি নম্বর আসে, সেগুলো আগে রপ্ত করতাম। যেসব টপিক পড়ে গেলেও কমন পড়ে না কিংবা ভালো নম্বর পাওয়া যায় না, সেগুলোর পেছনে সময় কম দিয়েছি।
বিগত এক বছরের কারেন্ট অ্যাফেয়ার্সের ফিচার ও উল্লেখযোগ্য সম্পাদকীয়গুলো কেটে একত্র করে নোট করেছিলাম, যা সাধারণ জ্ঞানের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
পরীক্ষা চলাকালে নির্ভার ছিলাম, কারণ আমার সামনে আরো পথ খোলা ছিল। বিসিএসে না হলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা দেশের বাইরে গবেষণার সুযোগ ছিল। তাই চাপমুক্ত থেকে লিখিত পরীক্ষা দিয়েছি।
পরীক্ষা ভালো হয়েছিল। ফল প্রকাশের আগে থেকেই ভাইভার প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। ভাইভা ভালো হয়েছিল, বোর্ডে আমাকে প্রায় ৩০ মিনিট রাখা হয়েছিল। পরীক্ষা শেষে নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল যে ক্যাডার পাব। তবে পররাষ্ট্র ক্যাডারে প্রথম হবো ভাবিনি।
একটা কথা মনে পড়ছে, বিসিএস পরীক্ষার আগে আমাকে কেউ কেউ হতাশ করার জন্য বলত, পররাষ্ট্র ক্যাডার পেতে সুদর্শন হতে হয়, প্রথম বিসিএসেই পররাষ্ট্র ক্যাডার পাওয়া যায় না, লিখিত পরীক্ষা ভালো দিয়েছ তো কী হয়েছে, প্রথমবারে কারোরই ফরেন ক্যাডার আসে না ইত্যাদি। তবে এক সিনিয়র ভাই আমাকে বলেছিলেন, যদি বিসিএস দিতে চাও এমনভাবে দাও, যাতে ফার্স্ট হতে পারো।
যখন পররাষ্ট্রে প্রথম হই, তখন তিনি আমাকে ফোন করে বলেছিলেন, ‘আমি ভাবিনি, তুমি সত্যি সত্যি প্রথম হবে!’
রহমত উল্লাহ শাকিল
1st in 37th BCS