বিবিএ নাম শুনে নাই এরকম মানুষ খুব কমই আছে। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় একটা ডিগ্রির নাম হলো বিবিএ। বিদেশের পাশাপাশি দেশেও এখন বিবিএর বেশ চাহিদা। ডিগ্রিটা মূলত ব্যবসায় শিক্ষার ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। তবে, বিজ্ঞান বিভাগ কিংবা মানবিক বিভাগ থেকেও বিবিএ করা যায়। এখন তো আবার ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ারদের অনেকেই তাদের ডাক্তারি, ইঞ্জিনিয়ারি পাশ করে ব্যবসায় শিক্ষা থেকে একটা ডিগ্রি নেয়। ডিগ্রিটা হলো- MBA (Masters of Business Administration). BBA হলো অনার্স লেভেলের ডিগ্রি আর MBA মাস্টার্স লেভেলের।

বিবিএ কী ?

Bachelor of Business Administration (BBA) বা ব্যবসায় অনুষদে স্নাতক হল বানিজ্য বিভাগ এবং ব্যবসায় অনুষদে স্নাতক ডিগ্রী। যারা ব্যবসায় শিক্ষার ওপর পড়াশোনা করতে চায়, তাদের জন্যই এই ডিগ্রিটা। এই ডিগ্রির অধীনে চার বছর ধরে মূলত ব্যবসায়, মার্কেটিং, ম্যানেজমেন্ট, হিউমেন রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট, একাউন্টিং, ফিন্যান্স, ব্যাংকিং এইসব বিষয়ের ওপর পড়ানো হয়। বিবিএ প্রোগ্রাম সাধারণত সাধারণ ব্যবসায় কোর্স ও বিশেষ ব্যবসায়
কোর্স (একাডেমিক মেজর) এই দুইটি কোর্স দ্বারা গঠিত।

বিবিএতে কী কী পড়ানো হয় ?

বিবিএর কারিকুলাম এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যাতে ব্যবসায় শিক্ষার পাশাপাশি একজন শিক্ষার্থী বিজ্ঞান, মানবিক, সামাজিক বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়েও অল্পবিস্তর জ্ঞান লাভ করতে পারে। বিবিএ তে বিভিন্ন বিষয়ে মেজর সাবজেক্ট রয়েছে। সাবজেক্টগুলো হলো-

1. Marketing
2. Finance
3. Management
4. Accounting
5. Banking
6. Human Resource Management (HRM)
7. Management Information System (MIS)
8. Accounting Information System (AIS)
9. Hospitality & Tourism Management
10. International Business…

SUST BBA-

সাস্টে বিবিএর যাত্রা শুরু ১৯৯৮ সালে। এখন ২০ তম ব্যাচ চলে। সাস্টে Department Of Business Administration এর অধীনে অনার্স লেভেলে BBA এবং মাস্টার্স লেভেলে MBA ডিগ্রি চালু রয়েছে। সাস্টের বিবিএর সিলেবাস মোটামোটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের IBA এর মতো। কোর্স এবং সিলেবাস হুবুহু IBA এর মত হলেও সাস্ট বিবিএর ক্রেডিট সংখ্যা IBA চেয়ে বেশী।

সাস্ট বিবিএতে এক্সট্রা ৩০ ক্রেডিটের মত Economics, Statistics, Public Administration, English, Sociology , IPE, CSE’র কয়েকটা সাবজেক্ট মাইনর হিসেবে পড়ানো হয়। এখানে উল্লেখ্য যে, সাস্ট বিবিএর সিলেবাস মূলত IBA’ এর শিক্ষকদের দ্বারাই প্রণীত। সাস্ট বিবিএতে প্রথম দিকে কম্বাইন্ডলি অনেকগুলো সাবজেক্ট পড়তে হয়।

তারপর তৃতীয়বর্ষ থেকে নির্দিষ্ট একটা মেজর সাবজেক্ট (কনসেন্ট্রেশন) সিলেক্ট করতে হয়। সাস্ট বিবিএতে নিম্নোক্ত মেজর সাবজেক্টগুলো চালু রয়েছে-

Accounting, Management, Marketing, Finance & Banking, Human Resource Management

সাস্ট বিবিএর অন্যতম ভালো দিকগুলো হলো-

১. প্রতি বছর সেকেন্ড সেমিস্টারে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে টিম বেইজড সেমিনার পেপার রেডি করে সাবমিট করতে হয়। যেখানে ফাইনাল প্রেজেন্টেশন এর দিন উপস্থিত থাকেন অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গুণী শিক্ষকরা।

২. প্রতি সেমিস্টারে বেশিরভাগ কোর্সে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন বাধ্যতামূলক।

৩. চার বছরের একাডেমিক কোর্স শেষ হওয়ার পর রয়েছে ইন্টার্নশিপ ও থিসিস করার সুযোগ। যেটা সকল জায়গায় নেই।

৪. রয়েছে অ্যালুমনাই এসোসিয়েশন।

৫. সাস্ট বিবিএতে পড়েছেন এরকম অনেকেই বর্তমানে হাই পেইড সেলারির বিভিন্ন সেক্টরের জবে কর্মরত আছেন।

৬. সিট ফিলাপ হওয়ার দিক থেকে BBA কে সাস্টে A ইউনিটের শীর্ষ সাবজেক্ট বলা যায়। A ইউনিটের মেরিট পজিশনে প্রথম দিকে থাকা বেশীরভাগ ছাত্রছাত্রীদের প্রথম পছন্দ বিবিএ।

উপরিউক্ত ভালো দিকগুলো ছাড়াও সাস্ট বিবিএর আরো অসংখ্য ভালো দিক আছে। তাই বলে খারাপ দিক যে একেবারেই নাই বিষয়টা মোটেই এরকম না কিন্তু। এখানেও অসংখ্য সমস্যা রয়েছে। সবকিছু আইবিএর মত হলেও একচুয়াল পারফরমেন্সটা অবশ্যই আইবিএর মত না। ক্লাসরুম সমস্যা, ল্যাব সমস্যাসহ আরো অসংখ্য সমস্যা আছে এখানে। তবে অদূর ভবিষ্যতে এসকল সমস্যার ছিটেফোঁটাও থাকবে না বলেই আমাদের বিশ্বাস।

চাকরীর সুযোগ কীরকম?

খুব বেশী। বিবিএ কমপ্লিট করে সরকারি, বেসরকারি, বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরী করার পাশাপাশি চাইলে উদ্যোক্তাও হওয়া যায়। চাকুরীক্ষেত্র বর্তমানে বিবিএ, এমবিএ করা ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রটাই সবচেয়ে বেশী প্রসারিত। চাকরির বাজারে বিবিএ শিক্ষার্থীদের জন্য ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের হিসাব বিভাগ, নিরীক্ষা বিভাগ, ট্যাক্স, আর্থিক প্রশাসন, আর্থিক

ব্যবস্থাপনা বিভাগ ইত্যাদিতে কাজের অসংখ্য সুযোগ রয়েছে। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবেও চাহিদা রয়েছে বিবিএ ডিগ্রীধারীদের।

বহুজাতিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই যেমন- HSBC Bank, Citi Bank, Standard Charterd Bank, British American Tobacco, Shell, Shevron, Uneliver ইত্যাদিতে বিবিএ, এমবিএ ডিগ্রীধারীদের সংখ্যাটাই সবচেয়ে বেশী।

বিদেশে উচ্চশিক্ষার সুযোগ কীরকম?

বিবিএ চলাকালীন সময়ে স্কলার্সশিপের সুযোগ পাওয়া না গেলেও বিবিএ কমপ্লিট করার পর স্কলার্সশিপের অসংখ্য সুযোগ পাওয়া যায়। বড়ভাইদের অনেকেই বিদেশের বিভিন্ন বিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলার্সশিপ নিয়ে পড়াশোনা করছেন।

শেষকথা: কে কোন সাবজেক্ট নিয়ে পড়াশোনা করবে এটা সম্পূর্ণই তার নিজস্ব ইচ্ছাধীন ব্যাপার। সত্যি বলতে কি জব ফিল্ডে বেস্ট সাবজেক্ট বলে আসলে কিছু নাই। আপনি যেই সাবজেক্ট থেকেই পড়াশোনা করেন না কেনো, সেখান থেকে আদৌ যদি কিছু শিখতে না পারেন তাহলে জীবনেও ভালো কোন চাকরি-বাকরি বগলদাবা করা সম্ভব হবেনা।

যুগটা এখন তথ্যপ্রযুক্তির। হাতের কাছেই গুগল আছে। কোন সাবজেক্টটা আপনার জন্য সবচেয়ে ভালো হবে সেটা নিয়ে চাইলেই প্রচুর পড়াশোনা করতে পারেন। পারেন কি বলছি এটা আসলে পারা উচিত। এই একটা সিদ্ধান্তের উপর আপনার বাকী জীবনের সবকিছু নির্ভর করছে। বেশী বেশী এক্সপ্লোর করতে পারলেই ফাইনাল একটা ডিসিশনে চলে আসাটা অনেক সহজ হয়ে যায়।

আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ হলো- ক্যারিয়ার গড়া বা সাবজেক্ট চয়েজের ক্ষেত্রে নিজের প্যাশন, নিজের ভালো লাগাকেই সবচেয়ে বেশী গুরুত্ব দেওয়া উচিত। যেই সাবজেক্ট পড়তে আপনার ভালো লাগে কিংবা যেই কাজটা করতে আপনি সবচেয়ে বেশী ভালোবাসেন সেই দিকেই আসলে আমাদের ক্যারিয়ার গড়া উচিত।

প্যাশন আর প্রফেশন মিলে গেলেই কিন্তু সর্বোচ্চ আউটকামটা বের করে আনা সম্ভব হয়। তাইবলে, যা-তা, অবাস্তব, সমাজে একেবারেই চাহিদা নেই এরকম প্যাশনকে প্রফেশন বানানোর চিন্তাটা অনেক বেশি ঝুঁকিপূর্ণ আর বেশ খানিকটা বোকামিও। সো, বি কেয়ারফুল। সবদিক ভালোভাবে চিন্তাভাবনা করে তবেই একটা ফাইনাল ডিসিশনে আসা উচিত। যাইহোক, সবার প্রতি শুভকামনা রইলো।

– Muhit Ahmed Jamil