বুয়েটে আর্কিটেকচারের আসন সংখ্যা ৬০।

বাংলাদেশের সাধারণ মানুষজনের বিশাল অংশ ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ বলতে যা বুঝে তা হলো মূলত বিল্ডিং ডিজাইন করা। কিন্তু, বিল্ডিং ডিজাইন করার মূল কাজটি কোনো ইঞ্জিনিয়ারের নয়, বরং আর্কিটেক্ট এর। তাহলে আর্কিটেক্টরা কি ইঞ্জিনিয়ার না??

উত্তর হলো, “না”। একজন আর্কিটেক্ট এর ‘আর্কিটেক্ট” পরিচয়টিই স্বতন্ত্র। স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর যাবতীয় বেসিক বিষয়াদি জানা ও সেটির সাথে নিজের সৃজনশীলতা কে জুড়ে দিয়ে তা বস্তুজগতে আমাদের সামনে উপস্থাপন করাটাই একজন আর্কিটেক্ট এর মূল কাজ।

সুন্দর এই পৃথিবীকে সুন্দর করে গুছিয়ে রাখতে হলে সবকিছুতেই চাই সুন্দর সৌষ্ঠব। এই কাজটাই করে থাকে একজন আর্কিটেক্ট। চারুকলার জ্ঞান থেকে নয় বরং ইঞ্জিনিয়ারিং জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কোন স্থাপনার ডিজাইন করানোই শেখানো হয় এই ডিপার্টমেন্টে। শুধু জ্ঞান না, বরং উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে শুন্য থেকে একটা পুরো স্থাপনার মডেল সৃষ্টি করা আর্কিটেক্টদের কাজ।

স্ট্রাকচারের ফাংশন, ফাংশনাল এরেঞ্জমেন্ট, স্পেস কোয়ালিটি, স্পেস এরেঞ্জমেন্ট, ওরিয়েন্টেশন ইত্যাদি বিষয়াদি নিয়ে পড়াশুনা করানো হয় এখানে। মজার বিষয় হচ্ছে এখানে যেমন বুর্জ খলিফা এর ডিজাইন শেখানো হয় তেমনি এখানে ওয়াশরুম কিংবা কিচেন রুমও বাদ দেওয়া হয়না।

সহযোগী যোগ্যতাঃ

সৃজনশীলতা, নতুন কিছু করার আগ্রহ, অনেক বেশি পরিশ্রমী, উদ্ভাবনী চিন্তাশক্তি সম্পন্ন হওয়া, লেগে থাকার অভ্যাস।

কিছু বিশেষ তথ্য

• অনেকে এটাকে চারুকলা মনে করে। এটা মোটেই চারুকলা নয়।
• আর্কিটেকচারে পড়ে আর্কিটেক্ট হওয়া যায়, ইঞ্জিনিয়ার নয়।
• অঙ্কন ভালো পারলেই আর্কিটেকচারে ভালো করা যায়না। তবে এটা কিছুটা সহায়ক হতে পারে।
• কোনো স্থাপনা ডিজাইন করা শুধু বাইরের আকার আকৃতি সুন্দর করা নয়। বরং সেই স্থাপনার কাজ, চারপাশের পরিবেশ, আবহাওয়া, স্থানীয় সংস্কৃতি ছাড়াও আরো অনেক দিক বিবেচনায় নিয়ে পুরো নকশা প্রণয়ন করাই আর্কিটেকচার এর বিষয়বস্তু।
• অন্যান্য ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্ট গুলোর চাইতে অনেক বেশি কঠিন এমন নয়, তবে এটা বেশি সময় ও শ্রম ডিমান্ড করে।
• বিভিন্ন প্রজেক্ট বেশি থাকায় এই সাবজেক্টে তুলনামূলক খরচ বেশি হয়ে থাকে।
• নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি, সৃজনশীল চিন্তা কিংবা কোনো কিছুকে বাক্সের বাইরে চিন্তা করার দক্ষতাই এই ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থীদের সফলতার মূল চাবিকাঠি।
• কথায় আছে, “তুমি যদি আরামপ্রিয় হও এবং সুখে শান্তিতে কষ্ট ছাড়া ভার্সিটি পাশ করার চিন্তা করে থাকো, তাহলে ডিপার্টমেন্ট অব আর্কিটেকচার তোমার জন্য না।“
• বুয়েটের বাকি ডিপার্টমেন্ট গুলোর গ্র্যাজুয়েশনের স্বাভাবিক সময় চার বছর। কিন্তু, আর্কিটেকচারের বেলায় আরো এক বছর বেশি, অর্থাৎ মোট পাঁচ বছর দরকার হয়।

কর্মক্ষেত্র

সরকারী

স্থাপত্য অধিদপ্তর, রাজউক, সিটি কর্পোরেশন গুলোতে রয়েছে ভালো মানের চাকুরীর সুযোগ। সেনাবাহিনী, পুলিশ বাহিনীতেও আর্কিটেক্ট নেওয়া হয়ে থাকে।

বেসরকারী

দেশে গড়ে উঠা অগণিত ডেভলপারস, আর্কিটেক্ট ফার্ম গুলোই বেসরকারী চাকুরির বড় জায়গা। এছাড়াও বিভিন্ন ব্যাংক, এনজিও তে আর্কিটেক্ট হায়ার করা হয়ে থাকে।

উদ্যোক্তা

অন্যান্য জবের পাশাপাশি নিজের কন্সাল্টিং ফার্ম খুলার সুযোগ রয়েছে।

শিক্ষকতা

বাংলাদেশের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় গুলো ছাড়াও অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন আর্কিটেকচার পড়ানো হয়। এছাড়াও কিছু প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়েও এখন আর্কিটেকচার সাবজেক্ট পড়ানো হয়। সেগুলোতে শিক্ষক হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে।

উচ্চশিক্ষা

অন্যান্য সাবজেক্ট এর মত এই সাবজেক্টেও হায়ার স্টাডির অনেক সুযোগ রয়েছে। দেশে এই সুযোগ কম থাকলেও বিদেশে প্রচুর সুযোগ রয়েছে। Architectural Design, Environment and Design, Art and History, Urban Planning and Design, Landscape, Climate and Design, Computational Architecture, Human Settlement and Housing, Conservation, Project Management, Building technology ইত্যাদি বিবিধ বিষয়ে হায়ার স্টাডিজ করা যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ফান্ডিং এবং স্কলারশিপ পাওয়া যায়।

আরো জানতে পড়ুন Architecture Department Review

RUET Architecture: একমুঠো ট্রেসিং আর এন্টিকাটারময় ডিপার্টমেন্টে স্বাগতম

Naval Architecture and Marine Engineering (NAME)