যারা প্রডাকটিভিটি পছন্দ করেন, এই লেখাটা তাদের জন্য।

আমি এখানে বেশ কয়েকটি প্রডাকটিভিটি টুলস নিয়ে সংক্ষেপে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছি যেগুলোর প্রায় প্রতিটি আমি নিয়মিতভাবে ব্যবহার করি।

আমি নিজেকে যথাসম্ভব প্রডাকটিভ রাখার জন্য অনলাইনের যে সমস্ত প্রডাকটিভ অ্যাপস/টুলস সাধারনত ব্যবহার করে থাকিঃ

১) Medium – এটা মুটামুটি আমার ইংরেজী ব্লগে পরিণত হয়েছে। গত ৫ বছর ধরে ব্যবহার করছি। এখানে ঢুকলে কিভাবে কিভাবে যে কয়েক ঘন্টা পার হয়ে যায় টেরই পাই না। মিডিয়াম হচ্ছে সিলিকন ভ্যালির প্রডাক্ট।

ননফিকশন কিংবা গল্প পড়ার জন্য এত চমৎকার, আধুনিক আর এনগেইজিং প্লাটফর্ম অনলাইন দুনিয়াতে আর এক্টাও নাই। গত ২ বছর ধরে ফেসবুকের চাইতে এখানে সময় বেশী দেয়া হয় আমার।

২) Grammarly – এটা একটা অটোমেটেড ওয়েব এপ্লিকেশন যেটা অত্যন্ত দক্ষভাবে ইংরেজী গ্রামারের ভুল ধরে, এবং সঠিকটা সাজেষ্ট করে। এর অনেকগুলো এড অন আছে। ব্রাউজার, ওয়ার্ড প্রসেসর বা মোবাইল এপ যেখানেই লেখেন না কেন, এটা আপনার লেখার ভুল ধরিয়ে দিয়ে সঠিকটা বলে দেবে।

যারা নিয়মিত ইংরেজীতে লেখালেখি করেন তাদের জন্য এটা মাষ্ট! এটাও ইউজ করছি প্রায় ৫ বছর ধরে। দীর্ঘ সময় ধরে এটি ব্যবহারের কারণে আমার ইংরেজী লেখার দক্ষতা অনেক বেড়েছে, আগে যে সব ভুলগুলো করতাম, সেগুলো এখন আর হয় না।

উল্লেখ্য, গ্রেমারলির ই-মেইল মার্কেটিং আমার লাইফে দেখা সেরা ই-মেইল মার্কেটিং!

৩) Muzli by InVision – Stay Inspired – যারা ডিজিটাল মিডিয়ার ডিজাইনার, বা নিদেনপক্ষে বিভিন্নরকম ডিজাইন দেখতে ভালোবাসেন, তাদের জন্য এইটা এক অনবদ্য সৃষ্টি।

অনলাইন দুনিয়ার বিভিন্ন ওয়েব সাইটের চিপাচুপা থেকে মাজলি আপনার জন্য আপনার কাংখিত কনটেন্ট নিয়ে এসে শোকেশের মতো আপনার সামনে উপস্থাপন করবে।

ইউজ করছি প্রায় ৩ বছর+ ধরে। Dribbble আর Behance ও আমার অত্যন্ত পছন্দের দুইটি প্লাটফর্ম। সুযোগ পেলেই ঢুঁ মেরে আসি।

৪) Quora – ইউজ করছি দেড় বছর ধরে। প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে খুঁজতে আর অন্যদের উত্তর পড়তে পড়তে হারিয়ে যাই মাঝে মাঝে। তবে কোরার UX আর ইন্টারফেসটা খুবই বোরিং। এই কারণে খুব বেশী ইউজ করা হয় না এটা। তবে মাঝে মাঝে কোরায় রিপ্লাই পড়ে হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাই। ভারতীয়রা আমাদের চাইতে অনেক বেশী একটিভ কোরাতে।

৫) Paper by FiftyThree Community – আইপ্যাডে আঁকাআকিঁর জন্য এটা আমার প্রথম পছন্দ। এর UX & UI এতটাই আর্কষনীয় যে, যে জীবনে কোনদিন আঁকেনি, সেও এই এপে ঢুকলে তার মনে হবে দেখি তো একটু আচঁড় টাঁচড় দিয়ে!

৬) Evernote – আমার সমস্ত প্রকার লেখালেখির ড্রাফটের জন্য আমার প্রথম পছন্দ এভারনোট। এটার সিংক্রোনাইজেশন আর ব্যাকাপ ফেসিলিটি অসাধারন। আমি ডেস্কটপে লিখে এর মোবাইল এপে ঢুকে লেখা কপি করে ওয়ালে বা বিভিন্ন গ্রুপে পোষ্ট করি, কারণ এটাতে এই কাজটা ডেস্কটপের চাইতে অনেক দ্রুত করা যায়।

৭) Trello – প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট টুল হিসেবে ট্রেলো রীতিমতো অদ্বিতীয়। জাপানিজ বিখ্যাত কানবান মেথড ব্যবহার করে এটাকে ডিজাইন করা হয়েছে। ব্যবহার করা খুবই সহজ, কিছুদিন ব্যবহার করলেই অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এটি ব্যবহার করছি গত ৪ বছর ধরে। আমার নিজস্ব কনটেন্ট ক্যালেনডারের জন্য আমি ট্রেলো ব্যবহার করি।

৮) LinkedIn – গত বছরের বেশ কয়েকটা মাস আমি লিংকইড পড়াশোনার পেছনে দিয়েছি। কিভাবে লিংকইডের প্রোফাইল সাজানো যায়, কিভাবে নিজেকে সেখানে আরো দক্ষভাবে উপস্থাপন করা যায়, এবং লিংকডইন এসইও, লিংকডইন মার্কেটিং – এসব নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করার চেষ্টা করেছি; নিজের প্রোফাইলটাকে একটু একটু করে সাজিয়েছি এবং এখনো সময় পেলেই আপডেট করি।

এটা বেশ কাজে দিয়েছে। গত ৭ বছরে আমি লিংকডইনে যতটা প্রোফাইল ভিউ আর কানেকশন রিকোয়েস্ট পেয়েছি, তার কমপক্ষে ৩০ গুন পেয়েছি গত ৮-১০ মাসে। আমার কেইস স্টাডিগুলো সেখানেও রেগুলার শেয়ার করি।

৯) Flickr – এটা পৃথিবীর সবচাইতে বড় অনলাইন ফটোগ্রাফার্স কমিউনিটি। ২০০৮ এ DSLR কেনার পর সারাদিন এর ফোরামে থাকতাম, ইয়াহু এটা রিভ্যাম্প করার পর নতুন UI/UX পছন্দ না হওয়াতে সেই যে বিমুখ হয়েছিলাম, অনেক বছর যাইনি। ইদানিং আবার যাওয়া শুরু করেছি। কারণ তাদের UX আবারো বদলেছে, এটা আগেরটার চেয়ে ভালো।

অনেকেই হয়তো জানেন না, এখন ফ্লিকর ১ টেরাবাইট স্পেস ফ্রি দেয়। কিন্তু আমি এটা ফটোগ্রাফি ছাড়া আর কিছুর জন্য ইউজ করি না। ইউজ করছি ২০০৭ সাল থেকে।

১০) SoundCloud – আমার প্রিয় গানগুলো, এবং নিজের আবৃত্তি তুলে রাখার জন্য মাঝে মাঝে ইউজ করি। লেখলেখি করা, শাওয়ার করা, বাসার কাজ করা – যেটাই করি না কেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে সাউন্ডক্লাউড বাজতেই থাকে! এটা ছেড়ে দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া আমার প্রায় ৩ বছরের বদভ্যাস!

মাঝে মাঝে পডকাস্টও শুনি কাজ করার সময়, স্পেশালি Ted Talk Daily. আমার কাছে বেষ্ট পডকাস্ট এপ হচ্ছে Google Podcasts. আমারও এক সময় শখ ছিলো নিজস্ব একটা পডকাস্ট চ্যানেল খোলার।

১১) Dropbox – এই জিনিসটা ছাড়া আর একটা দিন কেন, একটা ঘন্টাও চলে না। আমার মতে দ্য বেষ্ট ক্লাউড স্টোরেজ এটা। পারসোনাল আর অফিসিয়াল দুই কাজেই ইউজ করি। ব্যবহার করছি ৮ বছর ধরে। গুগল ড্রাইভ আর মেগাও করি।

অনেকেই হয়তো জানেন না, Mega.nz ৫০ জিবি স্পেস ফ্রিতে দিয়ে থাকে। হ্যাঁ, আপনি ভুল পড়েননি। ৫০ জিবি। এবং সম্পূর্ণ ফ্রি।

১২) Vimeo – ইউটিউবের দৌরাত্ন্যে অনেকেই হয়তো ভিমিওর কথা জানেন না। ভিমিওতে অনেক চমৎকার সব শর্টফিল্ম আর এনিমেটেড ফিল্ম পাওয়া যায়। ইদানিং ইউটিউবে রেগুলার হতে চেষ্টা করছি। ভিডিও কনটেন্ট বানাবার প্রতি আগ্রহ বাড়ছে আমার।

১৩) Pocket – এটা একটা বুকমার্কিং টুল। ফেসবুকের SAVE বাটনের মতই এর ফিচার। তবে আরো অনেক বেশী ভার্সাটাইল। ইউজ করছি আড়াই বছর ধরে। পকেটের সবচাইতে বড় সুবিধা হচ্ছে, এটাকে অফলাইনেও পড়তে পারা যায়। Google Note ও ইউজ করা হয় মাঝে মাঝে।

১৪) Google Maps – বাসা থেকে বের হলে এটা অলটাইম আমার ফোনে চালু থাকে। গত কয়েক বছর যাবত আমি এটাতে ভয়ানক এডিকটেড হয়ে গেছি। আমার রিয়েল টাইম লোকেশন ছোট ভাই ও কাছের বন্ধুদের সাথে শেয়ার করি, ট্রাফিক জ্যাম দেখি। সাইকেলে থাকলে turn-by-turn navigation ব্যবহার করি।

১৫) WordPress – গত ১ যুগে ওয়ার্ডপ্রেস থেকে যে পরিমান হেল্প পেয়েছি, এর ঋন শোধ করার নয়। আমি নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচয় দেবার চাইতে ব্লগার হিসেবে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করি, এবং আমাকে যেহেতু প্রচুর ব্লগ পোষ্ট লিখতে হয়, সেহেতু ওয়ার্ডপ্রেস হচ্ছে আমার খুবই ঘনিষ্ঠ ও উপকারী একজন বন্ধু।

এটিকে প্রায় প্রতিদিনই ব্যবহার করতে হয়। আমি এটি ব্যবহার করছি ২০০৮ সাল থেকে। নিজের জন্য গোটা পাঁচেক ওয়াডপ্রেস ব্লগ বানিয়েছি গত এক দশকে। 😁

ওয়ার্ডপ্রেসের জন্ম না হলে দুনিয়াতে এত ব্লগারের জন্ম হতো না, আর সামান্য ব্লগ মেইনটেইন করতে হলেও পেশাদার ডেভেলপার হায়ার করতে হতো – ওয়ার্ডপ্রেস থাকার ফলে কোন রকমের কোডিংজ্ঞান ছাড়াই যেটা যে কোন ব্লগার নিজেরাই করতে পারছে। আমার ব্রাউজারে এর একটা ট্যাব খোলাই থাকে অলটাইম।

১৬) ইলেকট্রিক গ্যাজেট আমার প্রথম পছন্দ, [আমাকে যদি কেউ – ”খুব দামী, ফ্যাশনেবল আর স্টাইলিশ জামা কাপড়” আর ”ফি বছর নিত্য নতুন সব গেজেট এক্সিপেরিয়েন্স করা” – এ দুটোর ভেতর যে কোন একটিকে বেছে নিতে বলে আমি চোখ বন্ধ করে ২য় টা বেছে নিবো। একটা ছেড়াঁ শার্ট পড়ে আজীবন কাটিয়ে দিতে পারবো আমি, কিন্তু গ্যাজেট ছাড়া জীবন সম্ভব না। :D ]

তাই কিছু টেকি ম্যাগাজিন নিয়মিত ফলো করি। যেমনঃ
i) The Next Web
ii) TechCrunch
iii) Gizmodo

১৭) আরো কিছু টুকটক এপ্স আমার পছন্দের, যার অনেকগুলোই আমাকে রেগুলার ইউজ করতে হয়। যেমনঃ

ক. Bitly – শুধু লিংক শর্ট করার জন্য না, আমি মূলত এটা ইউজ করি আমার লিংকের ক্লিক হিস্টরি/পরিসংখ্যান দেখার জন্য, যেটা বিটলির চাইতে আর কেউ এত চমৎকারভাবে করতে পারে না।

খ. Snapseed – মোবাইল ইমেজ রিটাচিংয়ের জন্য আমার ১ম ও একমাত্র পছন্দ! এটাতে এডিট না করে আমি মোবাইলের কোন ছবিই আপলোড করি না কোথাও।

গ. Pushbullet – এটা ছাড়া আমার একদিনও চলে না। এইরকম প্রায়ই হয় না যে আপনি ল্যাপটপে বসে বসে কাজ করছেন, হঠাৎ আপনার দরকার পড়লো কোন একটা লিংক, বা কোন একটা ছবি বা ছোট একটা ফাইল আপনার মোবাইলে পাঠানোর? কিংবা ভাইস ভার্সা। তখন কি করেন?

একটা সময় আমি এই কাজটা করার জন্য মেসেনজার ইউজ করতাম। কিন্তু গত ১ বছর ধরে ইউজ করছি পুশবুলেট। যে কোন ফাইল বা লিংক বা যে কোন কিছু চোখের পলকে ল্যাপটপ টু মোবাইল ট্রান্সফার করা যায়।

ঘ.Product Hunt  – নিত্য নতুন সেবা বা প্রডাক্ট এর মেলা বসে এইখানে। তবে অনেকদিন হল ঢুকা হয় না।

ঙ. Goodreads – যে সব বই পড়ার সময় বা সুযোগ হয় না, সে সব বইয়ের রিভিউ পড়ি এখানে গিয়ে। মানুষজন এখানে কি যে সুন্দর সুন্দর বুক রিভিউ লেখে! যত পড়ি তত মুগ্ধ হই! ব্যবহার করছি প্রায় ৬ বছর ধরে।

আপনি প্রডাকটিভ থাকার জন্য কি কি এপ্স কিংবা টুলস ইউজ করেন সেগুলোও প্লিজ কমেন্টের ঘরে শেয়ার করুন।

এই পোষ্ট লেখার মূল উদ্দেশ্য হলো, I am trying to find out what are the other awesome productive apps or tools I am missing out?

লেখক: প্রলয় হাসান

লেখকের আরো লেখা:

কেন রাতারাতি হারিয়ে গেলো Ekhanei.com?

আইডিয়া বড়, নাকি এক্সিকিউশন?