বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আগে জানতে হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষমতা ও সীমাবদ্ধতা নিয়ে।

অন্য দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মানে বিশ্ববিদ্যালয় হলেও বাংলাদেশে বিশ্ববিদ্যালয় চার ধরণের।

১. স্বায়ত্তশাসিত
২. পাবলিক
৩. সরকারি
৪. প্রাইভেট

প্রথম তিনটি দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় পরিচালিত হলেও এদের মধ্যে ক্ষমতার বিভাজন রয়েছে।

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকিছু সরকারের টাকায় হয়। এদের গঠনতন্ত্র এবং সিন্ডিকেট আছে। সিন্ডিকেট আলোচনা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আবার সরকার সে সিদ্ধান্ত মানতেও পারে, হস্তক্ষেপও করতে পারে।
উদাহরণ হিসেবে বুয়েটে আবরার হত্যা সময়কালীন ঘটনা মনে করিয়ে দিই।
ছাত্ররা যখন ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে, ভিসি তখন সেখানে ছিলেন না। তিনি বলেছিলেন, তিনি মন্ত্রির সাথে যোগাযোগ করছিলেন। অর্থাৎ উনি সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় ছিলেন।
পরবর্তীতে শিক্ষামন্ত্রী জানান যে বুয়েট নিজেরা সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। সরকার হস্তক্ষেপ করবেনা।

এবং পরে সবাই মিটিং এ বসে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।

এই বিষয়টা হলো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

এর কয়েকবছর আগের কথা মনে করি।
নুরুল ইসলাম শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষায় ইংরেজিতে ৯/১৩% পাস করে।
এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেছিলেন – ঢাবি কী এমন পরীক্ষা নেয় যে ৯০% শিক্ষার্থী ফেল করে!

এর জবাবে তখনকার ভিসি বলেছিলেন, ঢাবির পরীক্ষা নিয়ে কথা বলার এখতিয়ার শিক্ষামন্ত্রীর নেই।

হ্যাঁ, এটা হলো স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়। যাদের সবকিছু নিজেদের আইনে চলে।

১৯৭৩ সালের স্বায়ত্তশাসন অধ্যাদেশ অনুযায়ী দেশের চারটি বিশ্ববিদ্যালয় এ ক্ষমতার অধিকারী। তারা হলো- ঢাবি, রাবি, চবি, জাবি।

স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় গুলো একেকটা দেশের মতো। তারা সবকিছুতে স্বাধীন।

এমনকি এসব বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির ক্ষমতা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ে বেশি!

ভিসিরা তাদের কাজের জন্য শুধুমাত্র সিন্ডিকেট বা সিনেটের কাছে জবাবদিহি করবে। এবং তাদের মেয়াদ শেষে ক্ষমতায় থাকাকালীন কোনো বিষয় নিয়ে আর জবাবদিহি করা যাবেনা।

কেউ যদি ভিসি থাকাকালীন দুর্নীতিও করে, তাহলে তা যদি সিন্ডিকেট আমলে না নেয়, বা তখন জিজ্ঞেস না করে, তাহলে এরপর তাকে আর এটা নিয়ে কোনো কৈফিয়ত দিতে হবেনা।

কিন্তু দেশের প্রধানমন্ত্রী সবসময় জনগণের কাছে কৈফিয়ত দিতে বাধ্য।

এমন ক্ষমতা কে না চায়?

এরকম একটা রাষ্ট্রের চালানোর মতো ক্ষমতা যার কাছে আছে, সে চাইলেই তার দেশকে সবার থেকে আলাদা করে দৃষ্টান্ত হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।

সে চাইলে জ্ঞানে, বিজ্ঞানে, গবেষণায় এবং বুদ্ধিবৃত্তি চর্চায় শীর্ষে আরোহণ করতে পারে।

কিন্তু এদেশের ভিসিদের তারচেয়ে পেছনের দিকে গমনের আগ্রহ বেশি।

রাবিতে যে ঘটনা ঘটলো, একজন শিক্ষক তার মতামত প্রকাশ করার পর বিশ্ববিদ্যালয় স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তার বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করলো। অথচ তাদের কাজ মতপ্রকাশে স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। তাদের কাজ দেশের শিক্ষা ও চিন্তায় ভিন্ন জগত তৈরি করা।সেটা না করে তারা পদলেহন, ভালোভাবে বললে পশ্চাদদের লেহনে ব্যস্ত।

একটা কথা আছে, আপনি যেমন, আপনার চারপাশে তাই হয়।
আমি মনে করি, এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্ব র‍্যাংকিং এ পিছিয়ে পড়ার জন্য একটা বিশ্ববিদ্যালয়কে নিয়ে যতটা আলোচনা করে, ততটা আলোচনা নিজের বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান নিয়ে করলে তারা নিজেরাই অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে পারতো।

উদাহরণ স্বরূপ – শুধু রাবিকে নিয়ে বলি।
রাবির শিক্ষক হেনস্থার এই বিষয় নিয়ে এখনো জোরালো প্রতিবাদ চোখে পড়েনি।
আপনি যদি চুপ করে থাকেন, অন্যায়ের প্রতিবাদ না করেন, তাহলে অন্যায়কারী আপনাকে আরো চেপে ধরবে।

কিন্তু যদি আপনি স্বোচ্চার হোন, সবাই যদি একসাথে প্রতিবাদ জানায়, তাহলে অন্যায়কারী যেমনি হোক, তারা পেছনে যেতে বাধ্য হবে।

এই কাজটা করতে হয় স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। কারণ তারা স্বাধীন। তাদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পুলিশকেও অনুমতি নিতে হয়। এত ক্ষমতা যার আছে, সে কেন চুপ করে বসে থাকে??

একই ঘটনা শাবিপ্রবি, বেরোবি সহ আরো বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটেছে।

এখনি সময় এই বিষফোঁড়া উপড়ে ফেলার, নাহলে তা কেবলি বাড়বে।

আর এর শুরুটা রাবি থেকেই হওয়া উচিৎ। কারণ এটি অন্য সব থেকে আলাদা!

প্রসঙ্গত – সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হলো যেগুলো সব ধরণের সিদ্ধান্তে সরকারের আদেশ মেনে চলে।
নতুন তৈরি এবং স্পেসালাইজড বা অল্প বিভাগ নিয়ে তৈরি কিছু বিশ্ববিদ্যালয় সরকারি।

যেমন – রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান প্রযুক্তি, শেখ ফজিলতুন্নেসা বিজ্ঞান প্রযুক্তি, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল বিশ্ববিদ্যালয়।

এ নিয়ে বিস্তারিত পাবেন এই লিংকে https://engineersdiarybd.com/public-and-government-university/

Loading