সায়েন্স নিউজ নামের একটি গণমাধ্যমের বিচারে বাছাই করা ১০ বিজ্ঞানীর একজন হয়েছেন বাংলাদেশি তরুণী তনিমা তাসনিম অনন্যা।

কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে গবেষণার জন্য তিনি এই স্বীকৃতি পেয়েছেন। সায়েন্স নিউজের ওয়েবসাইটে গত ৩০ সেপ্টেম্বর এ–সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

গবেষণার এ কাজকেই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে সায়েন্স নিউজ। একে ‘অসাধারণ গবেষণা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

তার মা শামীম আরা বেগম গত ৫ অক্টোবর জানান, অনন্যা ঢাকার মানারাত ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এবং কলেজ থেকে ২০০৮ সালে এ-লেভেলে ছয়টি সাবজেক্টে এ পান। ২০০৬ সালে কেমব্রিজ ইন্টারন্যাশনাল থেকে ও-লেভেলে পরীক্ষায় দশটি এ এবং চারটি ডিস্টিংশন পান ।

এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো এমন বিজ্ঞানীর তালিকা প্রকাশ করল সায়েন্স নিউজ। ‘এসএন টেন: সায়েন্টিস্ট টু ওয়াচ’ নামের এই তালিকায় শুরুতেই স্থান পেয়েছেন তনিমা তাসনিম।

কৃষ্ণগহ্বরের নিখুঁত ছবি তৈরি করেছেন তিনি। গবেষণার এ কাজকেই বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করেছে সায়েন্স নিউজ। একে ‘অসাধারণ গবেষণা’ বলে অভিহিত করা হয়েছে।

সায়েন্স নিউজ ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এটি একটি স্বাধীন ও অলাভজনক প্রতিষ্ঠান। বিজ্ঞান, ওষুধ ও প্রযুক্তির হালনাগাদ তথ্য সরবরাহ করাই এর প্রধান লক্ষ্য। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক এই প্রতিষ্ঠান ছয় বছর আগ থেকে তরুণ ও ক্যারিয়ারের মাঝামাঝি থাকা বিজ্ঞানীদের একটি শীর্ষ তালিকা প্রস্তুত করে আসছে।

এই তালিকায় ৪০ বছর বা তার কম বয়সী বিজ্ঞানীরা স্থান পেয়ে থাকেন। এবং তারা প্রত্যেকেই নোবেল বিজীয়দের দ্বারা মনোনীত হন। এবার সেই তালিকাতেই বাংলাদেশি তনিমা তাসনিম জায়গা করে নিলেন।

সায়েন্স নিউজের ওয়েবসাইটে লেখা আছে, তনিমা তাসনিম একজন মহাকাশবিজ্ঞানী। বর্তমানে ডার্টমাউথ কলেজের সঙ্গে তিনি যুক্ত আছেন।

৩০ সেপ্টেম্বর সায়েন্স নিউজের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একসময় ঢাকার বাসিন্দা তনিমা এখন পর্যন্ত তিনি সবচেয়ে ভারি কৃষ্ণগহ্বরের পূর্ণাঙ্গ চিত্র এঁকেছেন।

এবং দেখিয়েছেন, মহাবিশ্বে কোথায় কীভাবে কৃষ্ণগহব্বর বেড়ে উঠছে এবং কীভাবে তারা তাদের পরিবেশকে প্রভাবিত করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে ব্যবহার করে তিনি এ কাজ করেছেন।

সায়েন্স নিউজের ওয়েবসাইটে লেখা হয়েছে, পাঁচ বছর বয়সে ঢাকায় থাকার সময় থেকেই তনিমা তাসনিমের মধ্যে মহাকাশের স্বপ্ন বুনে দেন তাঁর গৃহবধূ মা।

তিনি মেয়েকে তখন শোনাতেন মঙ্গলে অভিযানে যাওয়া পাথফাইন্ডার মহাকাশযানের গল্প।

সেই থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে তনিমার। তিনি জানান, ওই সময় থেকেই মহাকাশবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখতেন।

তনিমার মা গৃহবধূ হলেও বিজ্ঞানের বিষয়ে তার কৌতূহল ছিল এবং তনিমার কৌতূহলকে তিনি উৎসাহিত করেছিলেন।

“যখন আমি বুঝতে পারি যে মহাবিশ্বে আরও অন্যান্য জগত রয়েছে, আমি তখনই জ্যোতির্বিজ্ঞান অধ্যয়ন করতে চেয়েছিলাম।” , বলেন তনিমা।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে এই বিষয়ে পড়ার সুযোগ না থাকায় আমি পেনসিলভেনিয়ার ব্রায়ান মাওর কলেজে পড়তে স্নাতক পর্যায়েই যুক্তরাষ্ট্রে চলে এসেছিলাম।

তনিমা বর্তমানে ডার্টমাউথ কলেজের একটি পোস্টডক্টোরালের গবেষণা সহযোগী। ব্রায়ান মাওরের পরে তিনি ২০১৯ সালে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

গবেষণার পাশাপাশি তিনি বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহী নারী শিক্ষার্থীদের জন্য একটি পরামর্শদাতা নেটওয়ার্ক, “ওয়াই-স্টেম (উচ্চারণ উইজডম যার অর্থ প্রজ্ঞা) ” এর সহ-প্রতিষ্ঠা হিসেবে কাজ করছেন।

তনিমা এবং অন্য চারজন বাংলাদেশি বিজ্ঞানী বাংলাদেশের ২০ জন হাইস্কুল ও কলেজ লেভেলের ছাত্রীকে পরামর্শক হিসেবে কাজ করছেন যারা ভবিষ্যতে গবেষণাখাতে তাদের লক্ষ্য খুঁজে পেতে পারে।

তনিমা তাসনিম এর আগে নাসা ও সার্নে ইন্টার্নশিপ করেছেন। এ ছাড়া কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও কিছুদিন পড়াশোনা করেছেন তিনি।