গত কয়েকদিনের গুরুত্বপূর্ণ খবর হলো দেশে এমাজন আর গুগল রেজিস্ট্রেশান করেছে। খবরের শিরোনাম বা সামারি পড়লে অনেকে হয়ত ভাবছে যে দেশে এমাজনের মাধ্যমে এখন থেকে জিনিসপাতি কেনা যাবে। আবার অনেকে হয়ত চিন্তা করছে যে দেশের ই-কমার্স খাত শেষ হয়ে যাবে।

মূলত ব্যাপারটা এইরকম কিছু না।

সব বড় আকৃতির কোম্পানির অনেক ধরণের প্রোডাক্ট থাকে। প্রোডাক্ট মানে সার্ভিস এবং গুডস। দেখা যায়, এইগুলোর মধ্যে অনেকগুলোর ব্যাপ্তি এতটাই বড় যে, আলাদা করে সাবসিডিয়ারি হিসেবে দেখাতে হয়। সাবসিডিয়ারির বিজনেস প্রসেস/ স্ট্রাকচারকে আলাদা ভাবেই “সাধারণত” সাজিয়ে থাকে কোম্পানিগুলো।

এমাজনের 40 টা সাবসিডিয়ারি আছে। আবার প্রোডাক্ট এবং টেকনোলজি অংশেও অনেকগুলো সার্ভিস আছে। এমাজনের এইরকম একটা সার্ভিস হলো AWS বা Amazon Web Services.

২.
AWS কী কী করে থাকে?

আমরা যদি এমাজনের ২০২০ সালের ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টকে রেফারেন্স হিসেবে নেই, তাহলে দেখবো রিপোর্টের ৬৫ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে – “The AWS segment consists of amounts earned from global sales of compute, storage, database, and other services for start-ups, enterprises, government agencies, and academic institutions.

AWS আসলে কত বড় সার্ভিস এইটা যদি দেখতে যাই, তাহলে একই রিপোর্টে আমরা দেখবো ২০২০ সালে শুধু AWS এর Net Sales এর পরিমাণ ছিলো ৪৫ হাজার ৩৭০ মিলিয়ন ইউএস ডলার। যেটি থেকে তাদের Operating Income ছিলো ১৩ হাজার ৫৩১ মিলিয়ন ইউএস ডলার। Net Sales এর ১২% এমাজন AWS থেকে অর্জন করেছে।

Consolidated Financial Statement এর Notes সেকশানে এমাজনের সেগমেন্ট ভিত্তিক বিজনেসকে ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং তার প্রতিটি তথ্য সন্নিবেশ করা হয়েছে।

৩.
এমাজন নিয়ে বলতে যেয়ে শুধু AWS নিয়ে বলছি, এইটা দেখে মনে হতে পারে ধান ভানতে শিবের গীত শুরু করলাম। আসলে “এমাজন দেশে এসেছে”- এই খবরের গুরুত্বপূর্ণ যায়গাটা হলো “AWS দেশে এসেছে।”

The Business Standard এর খবরে এই লাইনটা লিখেছে এভাবে –
Providing more details, NBR’s VAT Online project director Kazi Mostafizur Rahman said, “We issued a BIN to Google on Monday and Amazon on Thursday. They registered under the names The Google Asia-Pacific Pte Ltd and Amazon web services Inc respectively.

অর্থাৎ বাংলাদেশে AWS এর রেজিস্ট্রেশান হয়েছে। রেজিস্ট্রেশান করার জন্য BIN নিতে হয়, অর্থাৎ বিজনেস আইডেন্টিফিকেশান নাম্বার। এর ফলে, এমাজন এবং গুগলকে এখন থেকে রিটার্ন জমা দিতে হবে, এবং ভ্যাট প্রদান করতে হবে। এর আগে যখন ভ্যাট প্রদান করতো এই প্রতিষ্ঠানগুলো তখন যে ব্যাংক থেকে টাকা বাইরে যেতো সেই ব্যাংক ভ্যাট কেটে রেখে দিতো। বাংলাদেশে দুটি প্রতিষ্ঠানের পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করবে PricewaterhouseCoopers, Bangladesh (PWC)

৪.
তাহলে কী এমাজন থেকে আমরা জিনিসপাতি কিনতে পারবো না?

অন্য দেশে যেভাবে কেনা যায়, বাংলাদেশে সেভাবে কেনা যাবে না। এমাজন বাংলাদেশে তাঁদের ই কমার্স চালু করতে চাইলে আবার রেজিস্ট্রেশান করতে হবে, AWS এর মাধ্যমে ই-কমার্স সার্ভিস দিবে না। যদি দেওয়া শুরু করে তাহলে National Board of Revenue ভ্যাট আইন/ কোম্পানি আইনের বিভিন্ন ধারা ভঙ্গ করার কারণে মামলা করতে পারবে।

এমাজনের ইউএস অডিটর Ernst and Young LLP হয়ত অডিট আপত্তি উঠাবে। কারণ এমাজনের ব্যবসায়ের ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্ট ইউএস সিকিউরিটি এক্সচেঞ্জে Form 10-K এর ফরম্যাটে দেখাতে হয়, যেখানে তাঁর প্রতিটি কার্যক্রমের ফিন্যান্সিয়াল পারফর্মেন্স দেখানোর বাধ্যবাধকতা আছে।

৫.
এমাজনের ওয়েবসাইটে গেলে দেখা যায়, বাংলাদেশ থেকে তারা সেলার হিসেবে রেজিস্ট্রার্ড করে থাকে। FBA বা Fulfilment by Amazon এর ক্ষেত্রে এইটা কতটা ভূমিকা রাখবে সেইটা এখনই বলা যাচ্ছে না। নিচের এই লিংকে কোন কোন দেশ থেকে সেলার হিসেবে কাজ করা যাবে সেইটার লিস্ট দেওয়া আছে।
https://sellercentral.amazon.com/gp/help/external/200405020

এমাজনের ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টকে আমরা যদি আরো বিশ্লেষণ করি, তাহলে দেখবো যে, ২০২০ এর রিপোর্টের পৃষ্ঠা নং ৬ এ এমাজন অনেক সুন্দরভাবে তার ব্যবসায়ের Risk Factor আলোচনা করেছেন। যেখানে আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে বিজনেস কিংবা ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে যে জুরিশডিকশানের তারতম্য তৈরি হয় সেটির কথা বলা আছে। নতুন মার্কেটে প্রবেশের ক্ষেত্রে কী কী ধরণের ফ্যাক্টর ঝুঁকি তৈরি করে থাকে, সেটিও আলোকপাত করা হয়েছে।

৬.
এখন প্রশ্ন হতে পারে, বাংলাদেশে “এমাজন” আসে নাই, কিন্তু AWS এসেছে, আবার গুগল এসেছে, তাহলে আমাদের বিজনেসের ইকোসিস্টেমে এইটার প্রভাব কতখানি পড়তে পারে?

পূর্বে যেহেতু বাংলাদেশ থেকে এই কোম্পানিগুলোর সার্ভিস নিতে হলে বেশ ঝামেলা করে নেওয়া লাগতো, এখন সেইটা কমে আসবে বলে মনে করি। পেমেন্ট সিস্টেমে আগে ইন্টারন্যাশনাল কার্ডের মাধ্যমে ফি/সাবস্ক্রিপশান দেওয়া লাগতো। এখন সেইটা হয়ত দেশীয় কারেন্সিতে প্রদান করা সম্ভব হবে।

আমাদের হয়ত মনে আছে কিছুদিন আগে যখন স্পটিফাই বাংলাদেশে সার্ভিস চালু করেছে, তখন গ্রামীণফোনের মাধ্যমে তারা পেমেন্ট করার একটি সিস্টেম চালু করেছিলো যেটিকে Value Added Service বলা হয়। আমাদের বেশ ভালো মানের ব্যাংক আছে, মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডার আছে। তাঁরা চাইলে অনেক ধরণের অফারের স্কিম শুরু করতে পারে AWS এবং গুগলের জন্য।

একই সাথে আমরা আশা করতে পারি, অন্যান্য ক্লাউড বেইজড সার্ভিস, এন্টারটেইনমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডাররা এই দেশে আরো দ্রুত চলে আসবে।

সূত্রঃ
এমাজনের ফিন্যান্সিয়াল স্টেটমেন্টঃ https://ir.aboutamazon.com/annual-reports…/default.aspx

– এনাম আহমেদ শুভ