অনেকের স্বপ্ন গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানে কাজ করবেন। দারুণ সুযোগ-সুবিধা, আকর্ষণীয় বেতন, সন্তোষজনক কর্মপরিবেশ সবার মনেই আগ্রহ জাগায়। যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি বেতন দিয়ে থাকে, এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে গুগল। কিন্তু গুগলের কর্মী হওয়া খুব সহজ কাজ নয়। কারণ, গুগলে চাকরি পেতে জিপিএ কিংবা পরীক্ষায় খুব ভালো নম্বর পাওয়ার বিষয়টির তেমন কোনো গুরুত্বই নেই।
নিউইয়র্ক টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে গুগলের মানবসম্পদ বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট লাজলো বক বলেছিলেন, গুগলে চাকরি পেতে গণিত ও কম্পিউটিং, বিশেষ করে কোড লেখার দক্ষতা জরুরি।
যদি কেউ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরীক্ষায় ভালো গ্রেড অর্জন করে এবং সত্যিকারের দক্ষতা দেখাতে পারে, তারা গুগলে চাকরির জন্য অবশ্যই আবেদন করতে পারে। গণিত আর কোড, এ দুটি দক্ষতা চাকরিপ্রার্থীর জন্য একটা বাড়তি সুবিধা করে দিতে পারে। তবে এ দুটির বাইরে গুগলে চাকরি পেতে আরও অনেক দক্ষতাই অর্জন করতে হবে।
গুগলে চাকরির জন্য পাঁচটি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়। যদি চাকরির পদটি কোনো কারিগরি বিষয় হয়, তবে জোর দেওয়া হয় কোডিং দক্ষতার ওপর। গুগলে চাকরির প্রায় অর্ধেকই অবশ্য কারিগরি শ্রেণিতেই পড়ে। প্রতিটি চাকরির ক্ষেত্রেই যে মূল বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয় তা হচ্ছে সাধারণ জ্ঞানের দক্ষতা। বিষয়টিতে আইকিউয়ের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলা ঠিক হবে না।
এখানে সাধারণ জ্ঞান বলতে বোঝানো হচ্ছে, কোনো বিষয় শেখার দক্ষতা, দ্রুত শেখার ক্ষমতা এবং তা কাজে লাগানোর ক্ষমতা। এই দক্ষতা হচ্ছে, অতিসূক্ষ্ম জিনিসের মধ্যে পার্থক্য করার ক্ষমতা। গুগলে চাকরির জন্য সাক্ষাৎকার নেওয়ার সময় আচরণগত এ বিষয়গুলো খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে নেতৃত্বগুণ। গুগলে চাকরি পেতে গেলে আরও দুটি ভালো গুণ অর্জন করা জরুরি। এর একটি নম্রতা, অন্যটি কোনো জিনিসকে দ্রুত নিজের করে নেওয়ার ক্ষমতা।
গুগলে চাকরি পাওয়ার জন্য আরেকটি দক্ষতা থাকতে হবে আর তা হচ্ছে কোনো কাজের ওপর ন্যূনতম অভিজ্ঞতা। ন্যূনতম অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কাউকে কাজে নেওয়া হলে তাঁর শেখার আগ্রহ, যোগাযোগ দক্ষতা, নেতৃত্ব দেওয়ার আগ্রহ থাকে। গুগল যে কাজটি করে তা হচ্ছে, প্রচলিত জিপিএ বা প্রচলিত শিক্ষার বাইরের মেধাগুলোকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করে।
গুগলে চাকরি পেতে সাক্ষাৎকার বোর্ডে বেশ কিছু আজব প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এ প্রশ্নগুলো একেক পদের জন্য একেক রকম হতে পারে। এ রকম ১০টি প্রশ্ন:
ক্রিয়েটিভ স্পেশালিস্ট: গুগলের ক্রিয়েটিভ স্পেশালিস্ট নিয়োগ দেওয়ার আগে তাঁর সাধারণ জ্ঞান ও দক্ষতা যাচাই করা হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি মাসে এক সাক্ষাৎকারে এ পদের প্রার্থীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল—এইচটিএমএল ৫-এর গুরুত্ব ল্যারি পেজকে বোঝানোর পর কীভাবে তা আমার দাদিকে বোঝাব?
ডেটাবেইস অ্যাডমিন: গুগলের গুরুত্বপূর্ণ একটি পোস্ট হচ্ছে ডেটাবেইস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর। এ পদে নিয়োগের জন্য ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এক সাক্ষাৎকারে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনাকে যদি এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার ও একটি মহাকাশযান দেওয়া হয় তবে মানবসভ্যতার সবচেয়ে বড় সমস্যা কীভাবে সমাধান করবেন?
সফটওয়্যার প্রকৌশলী: সফটওয়্যার প্রকৌশলীদেরও নানা জটিল প্রশ্ন করে গুগল। এর আগে এক কর্মীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনাকে গোড়া থেকে গুগল ম্যাপ তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হলে গেটওয়ে অব ইন্ডিয়াতে (মুম্বাই) দাঁড়ানো এক ব্যক্তিকে গাইড করে ইন্ডিয়া গেটে কীভাবে নেবেন?
প্রোডাক্ট মার্কেটিং ম্যানেজার: গুগলের প্রোডাক্ট মার্কেটিং ম্যানেজারদের চাকরির আগে প্রশ্ন করা হতে পারে, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিবছর কলেজ সিনিয়র যাঁরা চার বছর মেয়াদি স্নাতক শেষ করে চাকরি নিয়ে বের হচ্ছেন, তাঁদের সংখ্যা অনুমান করে বলুন।
অ্যাসোসিয়েট প্রোডাক্ট ম্যানেজার: এ পদের কর্মীদেরও নানা কৌশলী প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়। এর আগে প্রশ্ন করা হয়েছিল, আপনার কাছে যদি ব্যাংকের ডেটাবেইস ব্যবহারের সুযোগ থাকে, তবে ওই তথ্য ব্যবহার করে বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য কীভাবে এটিএম তৈরি করবেন?
প্রোডাক্ট ম্যানেজার: গুগলের প্রোডাক্ট ম্যানেজার পদটিকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়। এ পদে চাকরির জন্য প্রশ্ন করা হয়, সান ফ্রান্সিসকোর ডাউনটাউনে গৃহহীন হওয়ার সমস্যা কীভাবে সমাধান করবেন?
কোয়ানটিটিভ কমপেনশেসন অ্যানালিস্ট: বিশ্বের কোথাও যদি আপনি গুগলের নতুন অফিস খোলেন তবে সেখানকার কর্মীদের বেতনভাতার বিষয়টি কীভাবে বের করবেন?
কোয়ানটিটিভ অ্যানালিস্ট: একটি কয়েন ১ হাজার বার চক্কর দিলে ৫৬০ বার হেড পড়ে। আপনি কি মনে করেন ওই কয়েনটি পক্ষপাতদুষ্ট?
ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজার: এ পদের জন্য বেশ মজার প্রশ্ন করা হয়। ধরুন, আপনি যদি কোনো জলদস্যু জাহাজের কাপ্তান এবং লুট করা সোনার ভাগ পেতে নাবিকদের ভোট লাগবে। যদি আপনার পক্ষে অর্ধেকের কম ভোট পড়ে তবে নির্ঘাত মৃত্যু। তাহলে কীভাবে ওই সোনা আপনি ভাগ করবেন, যাতে নিজের ভাগে বেশিটা পড়ে এবং আপনি টিকেও যান?
বিজনেস অ্যাসোসিয়েটস: একটি খড়ের গাদায় হারানো সুচ আপনি কত উপায়ে খুঁজবেন?
তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো