উন্নত বিশ্বের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাদের বানায় আর আমরা কাদের ভিসি বানাই!

অতীশ দাভোলকার (Atish Dabholkar) আব্দুস সালাম ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরিটিক্যাল ফিজিক্সের নতুন ডিরেক্টর হিসাবে যোগ দিয়েছেন। ইতালির ত্রিয়েস্তে শহরের এই সেন্টারের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম ডিরেক্টর ছিলেন নোবেল জয়ী প্রফেসর আব্দুস সালাম। আর অতীশ দাভোলকার হলেন পঞ্চম ডিরেক্টর। প্রফেসর অতীশ দাভোলকার প্রথমত একজন string theorist! এছাড়া কোয়ান্টাম ব্ল্যাক হোল ও প্রফেসর সালামের নোবেল জয়ী কাজ ইলেক্ট্রোউইকের উপরও তার ভালো কাজ আছে। আমিও এই সেন্টারে পড়েছি। আমার জীবনের মোর ঘুরিয়ে দিয়েছে এই সেন্টার।

ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি কানপুর (IIT Kanpur) থেকে আন্ডারগ্রাজুয়েট করা। প্রফেসর অতীশ দাভোলকার পিএইচডি করেন প্রিন্সটন থেকে তারপর পোস্ট-ডক করেন ক্যালিফর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি, Rutgurs বিশ্ববিদ্যালয় ও হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১৯৯৬ সালে তিনি ভারতে ফিরে এসে টাটা ইনস্টিটিউট অফ ফান্ডামেন্টাল রিসার্চ সেন্টারে যোগ দেন এবং সেখানে ২০১০ সাল পর্যন্ত থাকেন। তারপর ফ্রান্সের Sorbonne University তে ফ্যাকাল্টি হিসাবে যোগ দেন এবং একই সাথে ICTP-তেও যোগ দেন।

এইবার ভাবুন ভারতের ইনস্টিটিউটগুলো কেমন মাপের শিক্ষার্থী তৈরী করছে। আমার জানা মতে ভারতীয়রা এখন ভারতেই পিএইচডি করে বিশ্বের সেরা সেরা প্রতিষ্ঠানে পোস্ট-ডক করে কেউ পশ্চিমা দেশেই থেকে যাচ্ছে আবার অনেকেই ফিরেও আসছে। ভারতের উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো আজ সেই উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। আর আমাদের সরকার একেকজন সরকারি কর্মকর্তাদের কোটি কোটি টাকা দিয়ে বিদেশে পিএইচডি করতে পাঠাচ্ছে। এতে দেশে গবেষণার পরিবেশ তৈরী হচ্ছে না এবং একই সাথে দেশের টাকা বিদেশে চলে যাচ্ছে। আর কাদের পেছনে এই টাকা? তাদের কি আদৌ পিএইচডির প্রয়োজন আছে? I mean, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চেয়েও তাদের পিএইচডি বেশি প্রয়োজনীয়? সত্যি সেলুকাস!

আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো প্রিমিটিভ আচরণ। ছাত্ররা সহপাঠীদের মারে এবং মেরেই ফেলে। ছাত্ররা শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলে। শিক্ষকরা শিক্ষকতা ও গবেষণা রেখে দলবাজি আর পদবাজিতে লিপ্ত। এইগুলো করে পুরো একটি জাতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। ধিক। কি আর বলব! কোথায় আমাদের উচিত আমাদের নতুন প্রজন্মকে নতুন নতুন জ্ঞান ও আবিষ্কারে মাতিয়ে রাখব। তা না করে তাদেরকে ব্যবহার করছি। ছাত্রদের ব্যবহার করে শিক্ষকদের গায়ে হাত তুলিয়ে তারপর আবার বড়গলায় বলে “আমার ছাত্ররা গণঅভ্যূত্যানের মাধ্যমে আমাকে মুক্ত করেছে, আমি তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। পৃথিবীর কোন দেশে এমনটা ঘটবে কল্পনা করা যায়?

 

লেখকঃ কামরুল হাসান মামুন

অধ্যাপক

পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়