সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (Central Intelligence Agency)-(CIA), যা সিআইএ নামেও পরিচিত, যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় সরকারের আওতাধীন একটি বেসামরিক গোয়েন্দা সংস্থা।

এটি একটি স্বাধীন সংস্থা, যার দায়িত্ব যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং উচ্চপদস্থ নীতিনির্ধারকদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ করা।বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী এবং সেরা গোয়েন্দা সংস্থা ।যার একমাত্র প্রতিদ্বন্দী বলা যায় একমাত্র ইসরায়েলী গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। অনেকসময় এরা একসাথে কাজ করে থাকে।

এটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮ই সেপ্টম্বর,১৯৪৭ সালে। এর প্রতিষ্ঠাতা চারজন হলেন যথাক্রমে ডোয়াইট ডি. আইজেন হাওয়ার, উইলিয়াম জে. ডনোভান, হ্যারি এস.ট্রুম্যান, এ্যালেন উয়েলস।এর প্রধান কার্যালয় আমেরিকায় জর্জ বুশ সেন্টার, ভার্জিনিয়াতে অবস্থিত((38°57′6.1″N ৭৭°8′48.1″w) )

১৯৪৭ সালে অনুমোদিত ন্যাশনাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট বা জাতীয় নিরাপত্তা আইনের মাধ্যমে সিআইএ গঠন হয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বরের আগে সিআইএ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা।

এটি শুধু নিজের কর্মকাণ্ডই নয়; বরং অন্য গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ড দেখাশোনা করত। কিন্তু ২০০৪ সালে ইন্টেলিজেন্স রিফর্ম অ্যান্ড টেররিজম প্রিভেনশন অ্যাক্ট ২০০৪ দ্বারা তা পরিবর্তিত হয়।

ওএসএস থেকে সিআইএ: আমেরিকার গোয়েন্দা সংস্থার ইতিহাস

১৯৪২ সাল, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের দাবানল তখন ছড়িয়ে পড়েছে এশিয়া-ইউরোপ ব্যাপী। এমনই এক গ্রীষ্মের সন্ধ্যায় ওয়াশিংটনের একটি রাজসিক বাড়ীতে মুখোমুখি বসে আছেন দুই বৃদ্ধ। এদের একজন প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বের জন্য ‘ওয়াইল্ড বিল’ খ্যাতি পাওয়া আমেরিকান যোদ্ধা উইলিয়াম জে ডোনোভান।

দেশের প্রতি কর্তব্যের ডাকে, ওয়াল স্ট্রীটে আইন ব্যবসা ছেড়ে, ডোনোভান আবার ইউনিফর্ম গায়ে ফিরে এসেছেন, হাতে তুলে নিয়েছেন সদ্য প্রতিষ্ঠিত সংস্থা অফিস অফ স্ট্র্যাটেজিক সার্ভিস (ওএসএস) এর দায়িত্ব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার কৌশলগত লড়াই পরিচালনার জন্য গঠিত হয়েছিল ‘ওএসএস’। ডোনোভান এ সময় উপলব্ধি করেন, কেবলমাত্র প্রচলিত পদ্ধতিতে যুদ্ধের মাধ্যমে জার্মান ও জাপানীজদের ঠেকানো সম্ভব নয়।

এর জন্য চাই গোপন গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক, অন্তর্ঘাতমূলক যুদ্ধ, দেশগুলোর অভ্যন্তরে কোন্দল বাড়ানো আর সর্বোপরি গোপন মিশনের জন্য উপযুক্ত অস্ত্র ও প্রযুক্তি। আর এ সব কিছুর মূল দায়িত্ব ন্যাস্ত করার জন্য তিনি হাজির হয়েছিলেন স্ট্যানলি প্লাট লোভলের কাছে।

লোভল একজন সফল রাসায়নিক বিজ্ঞানী ও ব্যবসায়ী,  নিজের ‘লোভল কেমিক্যাল কোম্পানী’-এর প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার নামে পেটেন্ট রয়েছে সত্তরটিরও বেশি। ইতোপূর্বে প্রেসিডেন্ট রুজভেল্ট যখন বিখ্যাত সব বিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে অস্ত্র তৈরীর জন্য ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রিসার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন, লোভল ছিলেন সেই কমিটির অন্যতম একজন সদস্য।

সপ্তাহখানেক আগেই, লোভলকে ওএসএস এর ‘গবেষণা ও উন্নয়ন’ বিভাগের দায়িত্ব নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন ডোনোভান। ডোনোভান বলেছিলেন

আমি এ গোপন যুদ্ধের জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরণের অস্ত্র চাই, যতধরণের কূটকৌশল আছে সব প্রয়োগ করতে চাই, আর এসব কিছু উদ্ভাবন করবে তুমি। 

প্রস্তাবটা পেয়ে প্রথমে উৎসাহে লাফিয়ে উঠেছিলেন লোভল। তার সামনে যেন হাজির হয়েছে শার্লক হোমস উপাখ্যানের জিম মরিয়ার্টি হওয়ার সুযোগ। মরিয়ার্টির মতো তিনিও হবেন এক গোপন অন্ধকার জগতের মাষ্টারমাইণ্ড, বিশ্বব্যাপী পরিচালনা করবেন এক নীরব যুদ্ধ।

কিন্তু কয়েক দিন পেরিয়ে গেলে তার উৎসাহেও ভাটা পড়তে শুরু করে, দ্বিধা দ্বন্ধ জড়িয়ে ধরে তাকে। সেসব ব্যাখ্যা করতেই আজ ডোনোভান এর কাছে হাজির হয়েছেন তিনি। এতটা বিস্তৃত পরিসরে গুপ্তচরবৃত্তির ধারণাটি আমেরিকাতে নতুন, নতুন লোভলের কাছেও। আমেরিকানরা জাতিগত ভাবে বহির্মুখী। তারা গোপনে বা কূটচালের মাধ্যমে কোনো কিছু করার চেয়ে, শক্তি ও তাকতের মাধ্যমে তা সম্পন্ন করতে ভালোবাসে। লোভলের দ্বিধার জায়গাটা এখানেই। তার মনে হচ্ছিল জিম মরিয়ার্টি একদমই আন-আমেরিকান এবং গোয়েন্দা সংস্থার ধারণাটি আমেরিকানদের নীতির সাথে যায় না।

ওএসএস-এর বিষয়ে যে একমাত্র লোভলই দ্বিধায় ভুগছিলেন তা নয়, বিরোধীতা এসেছিল অন্যান্য দিক থেকেও। এক সিনেটর তো বলেছিলেন “ডোনোভান এখন আমেরিকার গেস্টাপো বাহিনীর প্রধান হতে যাচ্ছেন।” সংবাদ মাধ্যমগুলোও নিয়মিত তিরষ্কার করে যাচ্ছিল ওএসএস-কে নিয়ে।

কিন্তু ডোনোভান ওসবকে পাত্তা দেননি। তবে লোভলের মনে প্রত্যয় যোগানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেন তিনি এবং তাকে বোঝাতেও সক্ষম হলেন যে এটি ‘আন-আমেরিকান’ পদ্ধতি হলেও, তারা সফল হলে এতে আমেরিকানরাই সবচেয়ে খুশী হবে।

লোভলকে রাজী করানোর পর, তাদের হাত ধরে গোয়েন্দা জগতের দ্য গ্রেট গেমে ওএসএস-এর যাত্রা শুরু হয়।

আমেরিকার ওএসএস তখন তাদের মিএ দেশ ইংল্যান্ডের এসওইউ ক্ষমতা,বুদ্ধি বেশি ছিলো।তাদের ২য় বিশ্ব যুদ্ধের আগে তারা চুক্তি স্বাক্ষর করে এক হয়ে কাজ করার।

তখন তারা নিজেদের মধ্যে টার্গেট দেশগুলোকে ভাগ করে নেন।তাদের নির্দিষ্ট কাজ গুলো করার জন্য।ডনোভানের ইচ্ছা ছিলো ওএসএসকে পৃথীবির শ্রেষ্ঠ গোয়েন্দা সংস্থা তৈরি করবে। তারা লোক নিয়োগ দেওয়া শুরু করলো।

অত্যাধিক ভালো প্রযুক্তি তখনকার সময়কার গুল ব্যবহার শুরু করলো।খুব দ্রুত তারা শিখে ফেলতে শুরু করলো প্রশিক্ষনের মাধ্যমে এবং অনেক নতুন অস্র বানিয়ে ফেলল তারা।

১৯৪৪ সাল নাগাদ বিশ্বব্যাপী ওএসএস এর নেটওয়ার্ক ছড়িয়ে পড়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে তাদের ভূমিকা ছিল অসামান্য। গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে শত্রুপক্ষের তথ্য সংগ্রহ, অন্তর্ঘাতমূলক যুদ্ধ পরিচালনাতো ছিল নিয়মিত কাজ।

তবে এটি যেহেতু শুধু যুদ্ধের জন্য গঠন করা প্রতিষ্ঠান ছিল, তাই যুদ্ধের পর এর অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়ে। কিন্তু ডোনোভান যুদ্ধের পরও পরাজিত শত্রুর ওপর নজরদারি জারি রাখার গুরুত্ব ভালোই টের পাচ্ছিলেন। 

কিন্তু তখন ডনোভান আন্দাজ করলেও তখনার মানুষ বোঝেনি।পরবর্তীতে রুজেল্ট কোনো সিদ্ধান্ত দেন নাই। পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানেক স্বাক্ষরে ১৯৪৫ সালের ২০ সেপ্টম্বর শেষ করে দেন। কিন্তু সম্পূর্ন ভাবে শেষ হয় নি। 

পরবর্তী টের পায় যুদ্ধ এখনো বাকি। তা হলো স্নায়ুযুদ্ধ। তাই আবার গোয়েন্দা সংস্থা প্রতিষ্ঠা করার চিন্তা করেন।

এর ফলে ১৯৪৭ সালে ট্রুম্যান ন্যাশনাল সিকিউরিটি এক্ট এ স্বাক্ষর  এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা হয় সেন্ট্রাল ইন্টিলিজেন্স এজেন্সি বা সিআইএ। মূলত ওএসএস এর কাঠামো নিয়েই আবার যাত্রা শুরু করে সিআইএ। শুরু হয় একের পর এক থ্রিলার উপন্যাসকেও হার মানিয়ে দেয়া উপাখ্যানের।

সাধারন পরিচয়

প্রতিষ্ঠা:- ১৮ সেপ্টম্বর,১৯৪৭ সাল

পূর্ব সংস্থা:-সেন্ট্রাল ইনটিলিজেন্স গ্রুপ

সদর দপ্তর:-ভার্জিনিয়া,যুক্তরাষ্ট্র

নীতিবাক্য:-দেশের সেবায়,সেন্ট্রাল ফর ইন্টিলিজেন্স

কর্মী:- আনুমানিক ২০০০০

বাজেট:- প্রায় ২০ বিলিয়ন

নির্বাহী:- পরিচালক: মাইক পম্পেও; উপপরিচালক:- স্টিফেন কাপেস

ওয়েবসাইট:-www.cia.gov

মিশনস অফ:সিআইএ

১.প্রসিডেন্টকে আমেরিকার প্রতি পৃথীবীর অন্যান্য দেশের পরবর্তী আক্রমন,কোনো ইস্যু নিয়ে চিন্তাভাবনা,বিদেশি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা সম্পর্কিত আগে থেকেই অবহিত ও সতর্ক করা।

২.সতর্কিত ও প্রস্তুত হওয়া এবং প্রেসিডেন্টকে অবহিত করা ,এমন বিদেশি রাষ্ট্রের পরিকল্পনা গুলো যা দ্বারা আমেরিকার হুমকি হতে পারে এমনকি মানুষ বা সম্পদের যা আমেরিকার সাথে সম্পর্কিত।

৩.বিদেশি রাষ্ট্রের গুপ্ত পরিকল্পনা গুলোকে আনকভার করা বা প্রকাশ করা।

৪.বিদেশি পরিকল্পনাগুলো  সন্ধান করে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া যেগুলো মানুষ,দেশের জন্য ক্ষতিকর তথা আমেরিকা সম্পর্কিত।

৫.সামরিক,অর্থনৈতিক,সামাজিক,রাজনৈতিক সবরকম বিষয়ে দরকারি বুদ্ধিপ্রদান করা যা তাদের প্রথম কাতারে রাখবে।

একজন সিআইএ এজেন্ট হওয়ার সাধারন যোগ্যতা:-

১.একটি ব্যাচেলর ডিগ্রী থাকতে হবে।এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি সিজিপিএ এবং সবদিক মিলিয়ে তুখোর শিক্ষার্থীকে প্রাধান্য দিবে।

২. বিদেশী ভাষার উপর দক্ষতা থাকতে হবে অবশ্যই।

 ৩.অ্যাপলিকেশনটি সম্পূর্ন সম্পাদন করতে হবে সূচারুভাবে।

৪.বিভিন্ন ভ্রমন ও সেখানে মানিয়ে নিয়ে থাকার যোগ্যতা থাকতে হবে।

৫.ধৈর্যশীল হওয়া চাই।

৬.টেস্ট পরিক্ষাগুলোতে সর্বাধিক সাফল্য থাকতে হবে এবং ব্যাকগ্রাউন্ড হতে হবে একক উজ্জল ।

৭.ট্রেনিং প্রোগ্রামগুলোতে সাফল্য তথা পাশ করার আবশ্যকতা রয়েছে।

৮.এখান থেকে বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন পরীক্ষায় এগিয়ে থাকা প্রার্থীদেরই কাজ পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। 

৯.গোপনীয় রক্ষার সর্বোচ্চ গুণ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হয়। 

১০.মারাত্মক মানসিক চাপ সামলে পারিপার্শিক অবস্থা বিশ্লেষণ করে নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করার দক্ষতা সিআইএ গোয়েন্দার থাকা চাই।

এ ছাড়া কম্পিউটর চালনা ও প্রযুক্তিজ্ঞান তাদের নিত্যদিনের কাজে প্রয়োজন হয়। সাঁতার, আকাশ থেকে লাফ, প্রচণ্ড শীতে টিকে থাকা, ম্যারাথন দৌড়ের মতো শারীরিক গড়ন ও সক্ষমতা গোয়েন্দাদের থাকা চাই। 

সেনাবাহিনীতে কাজ করার অভিজ্ঞতা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে। পৃথিবীব্যাপী অসংখ্য প্রচলিত ভাষায় গভীর জ্ঞান অর্জন করা যে কোনো এজেন্টের নামের পাশে বাড়তি নম্বর যোগ করে।।

গোয়েন্দাগিরি কথন:- সিআইএ

সিআইএর মতো শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা পৃথিবীতে কমই আছে। সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহল জাগে— আমেরিকা কীভাবে সারা বিশ্বে গোয়েন্দা বৃত্তি চালায়? 

 গুপ্তচররাই তাদের আসল সোর্স হিসেবে কাজ করছে। প্রায় প্রতিটি দেশে তাদের সরাসরি এজেন্ট রয়েছে। 

এ ছাড়া তাদের হাতে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। ইন্টারনেট, স্মার্টফোন, স্মার্টটিভি, টেলিফোন, ই-মেইল—এসব প্রযুক্তিতে তথ্য আদান-প্রদানের সময় নজরদারি চালিয়ে থাকে।

 তা ছাড়া তথ্য আউটসোর্সিংয়ে বিশাল অঙ্কের টাকা ব্যয় করে তারা। নিজ দেশের লোকই টাকার লোভে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তাদের কাছে বিক্রি করে থাকে। 

রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ও নীতি-নির্ধারক লোকদের অর্থবিত্তের মাধ্যমে কিনে নেয়। সিআইএ তথ্য সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন বেসরকারি এনজিওকেও বিভিন্ন দেশে ভালোভাবেই ব্যবহার করেছে। 

নানামুখী সেবা, কর্মসংস্থান সৃষ্টির আড়ালে তারা সূচারুভাবে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে বিশ্বজুড়ে। 

সিআইএর অন্যতম প্রধান গোয়েন্দা তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যম হচ্ছে মিডিয়াগুলো। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের পত্রপত্রিকা, টিভি চ্যানেল, সরকারি প্রকাশনা, পরিসংখ্যান, সরকারি কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদদের বক্তৃতা-বিবৃতি থেকে তারা তথ্য সংগ্রহ করে। 

নানাভাবে বিশ্বজুড়ে ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহে কাজে লাগায় তারা। 

বড় বড় সেনা কর্মকর্তাকে অস্ত্র ব্যবসার ফাঁদে ফেলে তাকে কাজে লাগিয়ে তথ্য উদ্ধার করার কথাও বলেছেন অনেকে।

সমমনা রাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক কাজে লাগিয়েও তারা গোপন তথ্য হাতিয়ে নেয়।

কার্যক্ষেত্র সারা বিশ্ব: সিআইএ

 বিশ্বের প্রথম সারির গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে বিবেচিত সিআইএ। । অত্যন্ত গোপনীয়তার কারণে কখনো সুনির্দিষ্টভাবে এই গোয়েন্দা সংস্থার অভিযান, কর্মসংখ্যা, বাজেট জানা যায়নি। বিভিন্ন সময় বিশেষজ্ঞদের মতামত ও অন্যদেশগুলো গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর পরিধি ও পরিকাঠামো নিয়ে নানা মতামত দিয়েছে। 

ধারণা করা হয়, সিআইএর কর্মী প্রায় ২০ হাজার। এদের মধ্যে রয়েছে স্পেশাল সিক্রেট এজেন্ট। বিভিন্ন স্কোয়াড থাকতে পারে বলেও মত দিয়েছেন তারা।

সিআইএ সম্পর্কে যে ধারণা পাওয়া যায় তাতে বলা হচ্ছে—বিশ্বের প্রতিটি দেশেই সিআইএর এজেন্ট রয়েছে। বিভিন্ন সংস্থা, ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে,  সামরিক কর্মকর্তা, মিডিয়াকর্মী সব ধরনের পেশাজীবীই তাদের সোর্স হিসেবে কাজ করে থাকে। 

বিশ্বব্যাপী তাদের গোপন নেটওয়ার্ক ও সোর্স এজেন্টের কারণেই সিআইএ এতটা শক্তিশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

তাদের ফাঁস করা নথিগুলো প্রমাণ করে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট, স্মার্টটিভি পর্যন্ত তারা হ্যাক করে নিয়েছে। ঘরের ভিতরের কথাবার্তা শুনতে বিশ্বের নামি দামি ব্র্যান্ডের স্মার্টটিভি হ্যাক করার চেষ্টা চালিয়েছে তারা। 

এ ছাড়া স্মার্টফোন ও ইন্টারনেটে আদান-প্রদানকৃত তথ্যও হাতিয়ে নেওয়ার কথা এই নথিগুলোতে রয়েছে।

প্রতিষ্ঠার পর থেকেই তারা বিভিন্ন উপায়ে মানুষের ওপর নজরদারি চালিয়ে আসছে। রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য হাতিয়ে নিতে তাদের তুলনা নেই।  

সিআইএ দেশে দেশে চালিয়ে এসেছে গোপন অভিযান। তারা হিটলিস্ট করে হত্যার চেষ্টা করেছে রাষ্ট্রনেতা, রাজনীতিবিদ। 

নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ড পরিচালনায় তাদের গোপন কিলিং স্কোয়াড যে কারও জন্য আতঙ্কের। 

হত্যাকাণ্ড ছাড়া গোপন কারাগারে বন্দী নির্যাতনের জন্য তারা সমালোচিত। এ ছাড়া বন্দীদের মুখ থেকে তথ্য আদায়ে নির্মমতম পন্থা বেছে নিতেও সিআইএ পিছিয়ে নেই।।

একদিন সিআইএতে ভ্রমন

সিআইএ গোয়েন্দা সংস্থাটি তাদের নিয়মিত কাজগুলোতে ছয়টি ভাগে কাজ করে থাকে।প্রথমত বলি তারা অ্যানালাইটিক্যাল কাজ করে। দেশের অর্থনীতি, গুরুত্বপূর্ন ইস্যু, অন্য সংস্থার উপর নজরদারী হিসেবে তারা ডাটা বিশ্লেষন করে।শেয়ার মার্কেট নিয়ে গবেষনা করে থাকে।

ব্যাবসা-বানিজ্যের নিরাপওা নিয়ে কাজ করে।তথ্য প্রযুক্তিকে বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়।আইটিসসেক্টরক্লউল্লেখযোগ্যভাবে ব্যবহার করেন তারা ব্যাবসার সিকিউরিটির জন্য।

ভাষার বিশ্লেষনে কাজ করে। বিভিন্নকোড বিশ্লেষন করে থাকে। বিভিন্ন দেশের ভাষাকে অ্যানালাইসিস করে থাকে তাদের তথ্য সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য।

নিত্য নতুন-ভবিষৎ প্রযুক্তি নিয়ে গবেষনা করেন।বিভিন্ন গ্যাজেট ও তৈরী করে।তাদের নিজস্ব এ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা স্বরুপ প্রযুক্তি নিয়ে বিস্তর গবেষনা করে।

এখানে ইন্টার্নশীপ শিক্ষার্থীদের নিয়ে কাজ করে থাকেন।সর্বশেষ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন বিষয় সিক্রেট তথা গুপ্ত পরিকল্পনা করে থাকেন।গুপ্ত অভিযানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দান করে চরম সাফল্যতার সাথে।ইতিহাস সৃষ্টিকারি বিভিন্ন অভিযান পরিকলপনা নিয়ে কাজ করেন।

সিআইএ এর নৃশংস্য দশটি অপারেশন

।।সেক্স ট্যাপ।।

২০০৩ সালে, আমেরিকার ইরাক আক্রমণের পূর্বে এরকমই এক হাস্যকর ‘প্রোপাগান্ডা অপারেশন’ পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সিআইএ।

 সাদ্দামের মতো দেখতে চেহারার কারো সাথে কোনো অল্পবয়সী ছেলের যৌন সঙ্গম করানো হবে এবং তা এমনভাবে ভিডিও করা হবে, যেন দেখে মনে হয় তা গোপন ক্যামেরায় ধারণকৃত একটি  সেক্স টেপ ।

কিন্তু উপরমহলের অনেক সিআইএ কর্মকর্তা এই উদ্ভট পরিকল্পনার পরিণাম উপলব্ধি করে এর কার্যক্রম বন্ধ করে দেন। সিআইএ’র উদ্দেশ্য ছিল এই যে, ভিডিওটি দেখে সাদ্দামের সমর্থকরা তার থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ইরাক আক্রমণের পথ পরিষ্কার হয়ে যাবে। তবে শেষপর্যন্ত এ ধরনের কোনো ভিডিও তৈরি করা হয়নি।

।।অপারেশন অ্যাকাউস্টিক কিটি।।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় আড়ি পাতার জন্য কিছুই বাদ রাখেনি সিআইএ। নির্বিঘ্নে আড়িপাতার জন্য তারা শুরু করেছিল বিড়ালকে প্রশিক্ষণ দেয়া! ‘এই অপারেশনে, প্রথমে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বিড়ালের কানে মাইক্রোফোন এবং মাথায় রেডিও ট্রান্সমিটার বসানো হয়।

আর এ দুইয়ের মধ্যে সংযোগের জন্য সূক্ষ্ম তার বসিয়ে দেয়া হয় বিড়ালের লোমের মাঝে। ব্যস, কথা রেকর্ড করার জন্য বিড়াল প্রস্তুত। এরপর একে বিশেষ কায়দায় ট্রেনিং দেয়া হতো ক্রেমলিনের ভেতরে গুপ্তচরবৃত্তি চালানোর জন্য। 

১৯৬৭ সালে পরীক্ষামূলকভাবে ওয়াশিংটনের রাশিয়ান দূতাবাসে গুপ্তচরবৃত্তি চালাতে একটি প্রশিক্ষিত বিড়াল ছেড়ে দেয়া হয়। দুর্ভাগ্যক্রমে বিড়ালটি একটি ট্যাক্সির নিচে চাপা পড়ে মারা যায়।  ২০ মিলিয়ন ডলার খরচ করার পর সিআইএ’র ব্যর্থ অপারেশনের তালিকায় নতুন যুক্ত হয় এই অপারেশনের নাম।

অপারেশন মনগুজ

১৯৬১ সালে কিউবায় সিআইএ পরিচালিত ‘বে অব পিগস’ ব্যর্থ হলে যুক্তরাষ্ট্র আরো মরিয়া হয়ে ওঠে ক্যাস্ট্রোকে হটানোর জন্য। 

১৯৬২’র ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয়ে যায় এবং মার্চে তা প্রেসিডেন্ট ও সিকিউরিটি কাউন্সিলের অনুমোদন পায়। এবারের পরিকল্পনা একাধিক, যেমন- গুপ্তচর দ্বারা কিউবান মানুষকে ক্যাস্ট্রোবিরোধী করে তোলা, ক্যাস্ট্রো প্রশাসনে নিজেদের গুপ্তচর ঢোকানো, কিউবার অর্থনীতি দুর্বল করে দেয়া এবং ক্যাস্ট্রোকে হত্যা করার নানাবিধ ‘সৃজনশীল’ পদ্ধতি। 

। প্রাথমিকভাবে ১০টি ৬ সদস্যের গুপ্তচরের দল প্রেরণ করা হয় কিউবায়। তাদের মূল কাজই ছিল কিউবায় নিজেদের সমর্থক খুঁজে বের করা কিংবা বৃদ্ধি করা। কিন্তু বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে তারা প্রত্যাশিত সংখ্যার ৪ ভাগের ১ ভাগেরও কম কিউবান মানুষকে বিদ্রোহের জন্য জড়ো করতে পেরেছিল!

এভাবে আর হবে না বুঝতে পেরে শুরু হয় কিউবার অর্থনীতি দুর্বল করার নানাবিধ চেষ্টা এবং ক্যাস্ট্রোকে হত্যা করবার ফন্দি ফিকির। এগুলোর মধ্যে কয়েকটি উদ্ভট পরিকল্পনা ছিলো,

  •  ক্যাস্ট্রোর ঘরে বিষাক্ত ঔষধ রাখা।
  •  ক্যাস্ট্রো যে রেডিও স্টেশনে যেতেন, সেখানে অ্যারোসলের মাধ্যমে লাইসারজিক অ্যাসিড ছড়িয়ে দেয়া।
  • সিগারেটের মধ্যে বিস্ফোরক স্থাপন করে দেয়া।
  • ক্যাস্ট্রোকে স্কুবা ডাইভিং স্যুট উপহার দেয়া, যার মধ্যে পূর্বেই মরণঘাতী রোগের জীবাণু স্থাপন করা থাকবে।
  • ক্যাস্ট্রো যে স্থানে স্কুবা ডাইভিংয়ে যান, সেখানে ঝিনুকের মধ্যে বিস্ফোরক স্থাপন করে দেয়া।
  • যেসব মাফিয়া ক্যাস্ট্রোর জন্য কিউবায় ক্যাসিনো চালাতে পারছিলেন না, তাদের সাহায্য নেয়া।
  • সিগারেটে বিস্ফোরক না দিয়ে বিষ দিয়ে দেয়া।
  • ক্যাস্ট্রোর চা-কফিতে ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়া মিশিয়ে দেয়া।
  • ক্যাস্ট্রোকে ফাউন্টেইন পেন উপহার দেয়া, যাতে থাকবে বিষ।

এগুলো সহ কমবেশি ৬০০ বার, ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে ক্যাস্ট্রোকে হত্যার চেষ্টা করে সিআইএ। ক্যাস্ট্রোর সাবেক প্রেমিকা মার্শিয়া লরেঞ্জের মাধ্যমে ক্যাস্ট্রোর ঘরে বিষাক্ত বড়িভর্তি একটা ঔষধের কৌটাও পৌঁছাতে সক্ষম হয় সিআইএ। কিন্তু শেষপর্যন্ত সব চেষ্টাই ব্যর্থ হয়। 

অপারেশন মোকিংবার্ড

রাশিয়ার  শক্তিশালী সংগঠন কেজিবি নিয়ন্ত্রিত ‘ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব জার্নালিস্টস’ বা আইওজে। আইওজে’র কমিউনিজম বিষয়ক প্রচারণার বিপরীতে কমিউনিজম বিরোধী প্রচারণা করবার জন্য সিআইএ শুরু করে ‘অপারেশন মোকিংবার্ড’।

অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই প্রজেক্ট শুরু হয় ১৯৫১ সালে। ২৫টি সংবাদপত্র এবং সংবাদসংস্থার সাথে যোগাযোগ করে সিআইএ। সাংবাদিকদের ঘুষ দেয়া সহ সব ধরণের তদবির করে, কমিউনিজম বিরোধী প্রচারণা চালাতে থাকে সিআইএ।

আর এসবের পেছনে বছরে খরচ হতো ২৩৫ মিলিয়ন ডলার! ১৯৭৬ নাগাদ এই ‘অর্থহীন সাদা হাতি’ গোপন অপারেশন শেষ হতে হতে বেঘোরে ব্যয় হয়ে গেছে বিশাল অঙ্কের অর্থ! 

অপারেশন মারলিন

১৯৯৭ থেকে শুরু হলো অপারেশনের কাজ। পরিকল্পনা ছিলা ভুল ডিজাইন দিয়ে ইরানের নিউক্লিয়ার প্রোগাম বিনষ্ট করে দিবে। একজন সাবেক রাশিয়ান পারমাণবিক পদার্থবিজ্ঞানীকে নিয়োগ করা হলো মাসিক ৫ হাজার ডলার বেতনে, যা পরে বেড়ে ৬ হাজার হয়েছিল। 

এই রাশিয়ান বিজ্ঞানীর দ্বারাই  ২০০০ সালের ৩ মার্চ ‘টিবিএ-৪৮০ ফায়ার সেট’ মডেলের পারমাণবিক অস্ত্রের ব্লুপ্রিন্ট ইরানি পরমাণুবিজ্ঞানীদের সরবরাহ ককরে সিআইএ।

কিন্তু রাশিয়ান বিজ্ঞানীও জানতো না যে এই ব্লুপ্রিন্টে রয়েছে সিআইএ’র ‘মোডিফিকেশন’। বরঞ্চ সিআইএ’র পক্ষ থেকে এই মডেলকে, তখনকার সময়ের চেয়ে অন্তত ২০ বছর অগ্রসর বলে দাবি করা হয়!

সিআইএ’র জন্য নিছক পরিতাপের বিষয় যে, রাশিয়ান সেই পরমাণু বিজ্ঞানী ‘২০ বছর অগ্রসর’ মডেলে কিছু মারাত্মক ভুল ধরে ফেলেন এবং ইরানিদের অবহিত করেন।

তখন সিআইএ’র নিকট নিজেদের পরিকল্পনাই কাটা ঘায়ে নুনের ছিটার মতো হয়। কারণ ২০ বছরের অগ্রসর দাবি করার জন্য তারা প্রকৃতপক্ষেই অনেক উন্নত ডিজাইন পাঠিয়েছিল, যার মধ্যে সূক্ষ্মভাবে কিছু ভুল ঢুকিয়ে দেয়া হয়। ফলে ইরানি বিজ্ঞানীদের জন্য এই ভুলগুলো জেনে যাবার পর, সঠিক অংশগুলো কাজে লাগানো আরো সহজ হয়ে যায়।

।।নকল টিকাদান কর্মসূচি।।

সাবেক আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে ধরতে কী না করেছে সিআইএ? তাদের মরিয়া প্রচেষ্টা অনেকসময় জন্ম দিয়েছে বিতর্কের। তবে, সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক যে কাজটি করেছিল সিআইএ, তা হচ্ছে নকল টিকাদান কর্মসূচী। 

তারা পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদের আশেপাশের অঞ্চলে বিন লাদেনের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে, টিকাদানের নাম করে হাজারো শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করে। উদ্দেশ্য পরিষ্কার, এসব নমুনার কোনোটির সাথে যদি বিন লাদেনের ডিএনএ মিলে যায়, তাহলেই হলো! 

এই হীন পরিকল্পনাকে বাস্তবতার মোড়কে ঢেকে দেয়া হয় পাকিস্তানি ডাক্তার শাকিল আফ্রিদিকে নিয়োগ করে। 

তবে, লাদেনের মৃত্যুর দুদিনের মাথায়ই সব ফাঁস হয়ে যায় এবং গ্রেফতার হন শাকিল। তাকে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে অভিযুক্ত করে ৩৩ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়।

সিআইএর এই অপারেশনের ফলাফল ছিল ভয়াবহ। পোলিও প্রবণ পাকিস্তানে এই ঘটনার পর থেকেই টিকাদান কর্মসূচী একরকম বন্ধ হয়ে যায়, গোয়েন্দাদের ষড়যন্ত্র বলে ভাবতে শুরু করে মানুষ।

।।অপারেশন আর্টিচোক।।

“আমরা কি মানুষের মনের উপর এমন নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারবো, যেখান থেকে সে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমাদেরকে সহায়তা করবে?” এই প্রশ্নটিকে সামনে রেখেই সিআইএ শুরু করেছিল।

সিআইএ’র সাথে এই অপারেশনে যুক্ত ছিল আমেরিকান সেনাবাহিনী, নেভি, বিমানবাহিনী এবং এফবিআইও। ইউরোপ এবং এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন গোপন স্থানে, অসংখ্য মানুষকে এই অপারেশনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মানসিক চাপের সম্মুখীন করা হয়।

তাদেরকে এলএসডি আর মরফিনের মতো মাদকে আচ্ছন্ন রাখা হতো টানা তিনদিন। নানা প্রক্রিয়ায় সম্মোহিত করার মাধ্যমে নিদ্রাহীনতা ঢুকিয়ে দেয়া হতো পরীক্ষা চলতে থাকা মানুষটির উপর। 

আর এই মানসিক অত্যাচারের শিকার হতো মূলত সমকামী, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষজন এবং জেলের বন্দীরা। মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই, শারীরিক নিপীড়ন না করে, কেবল মানসিক অত্যাচার দ্বারা জিজ্ঞাসাবাদ সফল করা যায় কিনা, তা দেখা।

এই হীন পরীক্ষামূলক অপারেশনের বলি ঠিক কতজন হয়েছিল, কবে শেষ হয়েছিল এসব জানা যায় না। কারণ, ৮০’র দশকে এই অপারেশন আর্টিচোকের কথা ফাঁস হবার পূর্বেই সকল ক্লাসিফায়েড তথ্য ধ্বংস করে ফেলা হয়।

।।ফিনিক্স প্রোগ্রাম।।

ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময়, ‘ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব সাউথ ভিয়েতনাম’ বা ভিয়েত কং বাহিনীর মূল অবকাঠামো ধ্বংস করা, তাদেরকে গুপ্তচরবৃত্তির মাধ্যমে ধরে নিষ্ক্রিয় করে দেয় কিংবা হত্যা করার জন্য উক্ত অপারেশন নামে এক ভয়াবহ ও নৃশংস গোপন পরিকল্পনা হাতে নেয় সিআইএ। 

১৯৬৫ সাল থেকে শুরু হওয়া এই প্রোগ্রামে অবর্ণনীয় বর্বরতা চালায় সিআইএ। প্রমাণিত কিংবা সন্দেহভাজন ভিয়েত কং, কেউ বাদ যায়নি সিআইএ’র অত্যাচার থেকে। ১৯৭২ সাল পর্যন্ত চলা এই প্রোগ্রামে সিআইএ’র অত্যাচারের কিছু রোমহর্ষক পদ্ধতি উল্লেখ করছি।

* ধর্ষণ, গণধর্ষণ থেকে শুরু করে সাপ, পাঁকাল মাছ নামক একপ্রকার সাপের মতো মাছ, শক্ত সরু বস্তু ইত্যাদি ব্যবহার করে ‘সৃজনশীল’ উপায়ে নারীদের উপর বর্বরতা চালানো!

* জিহ্বা, জননাঙ্গের মতো স্পর্শকাতর অঙ্গে বৈদ্যুতিক শক দেয়া!

* মাথা নিচের দিকে করে বারবার পানিতে ডোবানো।

* দুই হাত পেছনে দিয়ে বেঁধে সিলিংয়ের সাথে ঝুলিয়ে রেখে পেটানো।

* হাত-পা বেঁধে বন্দীর উপর আক্রমণাত্মক কুকুর ছেড়ে দেয়া।

* দিনের পর দিন আটকে রেখে অনাহারে হত্যা করা।

* কানের মধ্য দিয়ে সরু রড, কাঠ বা এ জাতীয় কিছু প্রবেশ করিয়ে হত্যা করা!

।।দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট।।

ভবিষ্যেক বিশ্লেষণ করার অনন্য ক্ষমতা নিয়ে শুরু হয়েছিল দ্য স্টারগেট প্রজেক্ট। এক কথায় বলতে গেলে মানুষের মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণের জন্যই এ প্রজেক্ট শুরু হয়। যুক্তরাষ্ট্র সরকার সিআইএকে দিয়ে করানো সবচেয়ে বড় আকারের প্রজেক্ট হিসেবে কুখ্যাতি পেয়েছিল এই স্টারগেট। 

মেধাবী সাইকিক তথা মনোবিজ্ঞানীদের হাত করেছিল সিআইএ। তাদের সংখ্যা ঠিক কত ছিল গোপনীয়তা ভেঙে সেটা আজও কেউ বের করতে পারেনি। 

তবে তাদের পেছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার ঢালা হয়েছিল। বিজ্ঞান স্বীকৃতি দেয়, অসাধারণ মেধাবীদের যে কোনো পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে অন্য সাধারণের চেয়ে শতকরা ১৫ ভাগ বেশি সঠিক তথ্য বা ভবিষ্যৎ ফলাদ বলেই অনেকের ধারণা।

 অসংখ্য সাইকিকের গোপনীয়তা ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কায় প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অবশ্য এখনো অনেকে বিশ্বাস করে, সিআইএ প্রজেক্টটি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

।।অপারেশন নর্থউডস।।

  • কিউবা থেকে আসতে থাকা ক্যাস্ট্রোপন্থী
  • অনেক শরণার্থীর নৌকা ডুবিয়ে দিতে হবে।
  • আমেরিকায় বসবাসরত কিছু কিউবান অভিবাসীকে হত্যা করতে হবে।
  • কিউবার সমুদ্রসীমার কাছাকাছি একটি আমেরিকান জাহাজ ডুবিয়ে দিতে হবে।
  • আমেরিকার বিভিন্ন শহরে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে কিছু সাধারণ মার্কিনকে হত্যা করতে হবে।
  • এই পরিকল্পনা কারা করতে পারে? আমেরিকা নিজেদের নাগরিক কেন হত্যা করবে? আর রাশিয়ান পরিকল্পনায়ও কিউবানদের ক্ষতি থাকার কথা না। তাহলে?

এরকম পরিকল্পনা কেবল একটি সংগঠনই করতে পারে, আর তারা হচ্ছে সিআইএ! হ্যাঁ, নিজেদের নাগরিক হত্যা করে, নিজেদের কিছু প্রধান শহরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, কিউবানদের বিরুদ্ধে জনমত সৃষ্টি করাই ছিল এই অপারেশনের মূল উদ্দেশ্য!

এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে সেগুলো কিউবার নামে চালিয়ে দিলে, কিউবাকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপে ফেলা যাবে। পাশাপাশি, প্রতিরক্ষার দোহাই দিয়ে সরাসরি কিউবা আক্রমণও করা যাবে! আর এই পরিকল্পনার নাম দেয়া হয় অপারেশন নর্থউড। কিন্তু পরবর্তীতি জন এফ কেনেডি এর অনুমোদন দেন নাই।

।।বিশ্ব যতদিন টিকে থাকবে মনে রাখবে ঘটে যাওয়া এই দুই  অপারেশন।।

লাদেন হত্যার নেপথ্যে আসলেই কী যুক্তরাষ্ট্র? : সিআইএ

লাদেন মৃত্যুর অনেক বছর কেটে গেলো ও এখনো সন্দেহ নেহাত কম নয় যে লাদেন জীবিত না মৃত।কেননা সিআইএ লাদেনের মৃতদেহ বা তার ডিএনএ প্রকাশ করেনি। কেনো করে নি তা নিয়ে সৎ উওর পাওয়া যায়নি। তাই জল ঘোলা থেকেই যায়।

২০১১ সালে ন্যাটোর হামলা লিবিয়াতে ,মিডিয়া তখন বারাক ওবামার পিছনে ছুটছে তার বক্তব্যের জন্য। লিবিয়া দাবী করেছিলো বেঁচে আছে গাদ্দাফী। ওবামা তার মিডিয়া কনফারেন্সে যা বলেছিলেন তার জন্য হয়তো কেউই প্রস্তুত ছিলো না।

ওবামা বলেলন যে সিআইএ পাকিস্তানে লাদেন সারা বিশ্বে  প্রায় এক দশকের অভিযানে পর হত্যা করতে সমর্থ হোন।

পরবর্তীতে লাদেনর ডিনএনএ অথবা মৃতদেহের ছবি প্রকাশ করেনি সিআইএ। তাই সন্দেহ থেকে যায় সবার মনে। তবে একজন রিপাবলিকান সিনেটের সদস্য বলেছিলেন তাকে এমনভাবে মারা হয় যে তা খুবই নৃশংস্য। ছবি দেখার মতো নয়।

প্রশ্ন থেকে যায় একজন মানুষকে মানবাধিকার লঙ্গন করে কিভাবে নৃশংস্য ভাবে হত্যা করা হয়?

একজন এনএসআই সাবেক কর্মকর্তা একটা লাদেন ষড়যন্ত্র প্রকাশ করেন যে লাদেন আসলে সিআইএ এর একজন এজেন্ট। তারা নিরাপদে নিয়ে আসার জন্য এমন কাহীনি সাজানো হয়।

লাদেনকে নাকি যুক্তরাষ্ট্রের বাহামা দ্বীপে বিলাসিতাপূর্ন জীবনযাপনের সবরকম ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে। তাকে প্রতি মাসে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ১ লাখ ডলার বেতন দেন।

কিন্তু পরবর্তীতে লাদেন হত্যার সত্যতা প্রকাশ করেন তার পরিবার নিজেই। এবং তার আল কায়েদা দল। এবং এইটাকে তাকে হত্যার বিশ্বস্ত প্রমান ধরে নেয়া হয়।।

৯/১১:-সিআইএ

ইসরাইল বিরোধী ইরাক এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোতে আগ্রাসন চালানোর লক্ষ্যে ৯/১১ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো হামলা। যুক্তরাষ্ট্রের মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক এবং বিশ্লেষক জেমস হেনরি ফেটজার ইরানের প্রেস টিভিকে একথা বলেছেন।

ফেটজার বলেন,

ইরাকের জনগণের দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব বিস্তারকারী চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কটের জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্র। 

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের সংঘবদ্ধভাবে চালানো ৯/১১ হামলার অবধারিত ফল হলো ইরাকে চলমান অর্থনৈতিক সঙ্কট। 

এই বিশ্লেষক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ যৌথভাবে ৯/১১ সাজিয়েছিল। 

তিনি জানান, ৯/১১ এর তাৎক্ষণিক পরিণতি হিসেবে আমেরিকান কর্মকর্তাদের ইরাকে আগ্রাসন চালানোর কারণ দেশটির তেল সম্পদ। 

ফেটজার বলেন, ইসরাইলের জন্য মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের চালানো ধ্বংসযজ্ঞ প্রকৃতপক্ষে জঘন্য এবং হতাশাজনক। 

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এখানে যা করেছে, তা কখনও ভুলবে না বিশ্ব। এটি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি কালোদাগ হিসেবে থাকবে। 

।।সিআইয়ের ৭৩ বছরের ষড়ষন্ত্রের ইতিহাস।।

১৯৪৭ সালে ট্রুম্যান প্রশাসনের অধীনে জাতীয় নিরাপত্তা আইনের আওতায় জন্ম হয় সিআইএর। জন্মের পর থেকেই কোরীয় যুদ্ধ, কঙ্গো কিংবা ইরানের সরকার উৎখাত করে একনায়কদের অধিষ্ঠিত করার মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয় সংস্থাটি। আজকের আফগান-সিরিয়ায় যুদ্ধ কোথায় নেই সংস্থাটি।

মার্কিন স্বার্থসিদ্ধির প্রয়াসে এ সংস্থা যেমন সৃষ্টি করেছে প্রকাশ্যে আমেরিকা-বিরোধী গোষ্ঠী আল কায়েদার মতো জঙ্গিগোষ্ঠী, তেমনি কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যায় হাত মিলিয়েছে শীর্ষ মাফিয়ার সঙ্গেও। ৭৩ বছর বয়সী এ সংস্থার ইতিহাস তাই ষড়যন্ত্রেরও ইতিহাস। 

মার্কিন টিভি ব্যক্তিত্ব ও ‘ফোনিক্স প্রোগ্রামের’ লেখক ডগলাস ভ্যালেন্টাইন সিআইএকে ‘মার্কিন সরকারের সংগঠিত অপরাধ সংস্থা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

মার্কিন পত্রিকা লারস শেলে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সিআইএ যা কিছুই করে, সব বেআইনি। কারণ সরকার সংস্থাটিকে এক অচ্ছেদ্য গোপনীয়তা অবলম্বনের এখতিয়ার দিয়ে রেখেছে। সংস্থাটি বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিভিন্ন অপরাধী সংগঠনের ব্যবস্থাপকের কাজ করে।

উদাহরণস্বরূপ কিউবার নেতা ফিদেল কাস্ত্রোকে হত্যার জন্য সংস্থাটি আমেরিকার শীর্ষ মাদকদ্রব্য চোরাচালানকারী সান্তো ত্রাফিকান্তেকে নিয়োগ করেছিল। এর বিনিময়ে সান্তোকে কয়েক টন মাদকদ্রব্য আমেরিকায় আনার ছাড়পত্র দিয়েছিল সংস্থাটি। এটা একটা উদাহরণ মাত্র।

মাফিয়া থেকে শুরু করে সব ধরনের অন্ধকারের শক্তির সঙ্গেই এর লেনদেন রয়েছে।’ 

কিন্তু এর গোপনীয়তার দেয়াল এতই শক্তিশালী যে, শেষ পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ এর বিরুদ্ধে উত্থাপন করা যায় না। যেকোনো অভিযোগই অস্বীকার করতে পারে সংস্থাটি।

সিআইএর অবসরপ্রাপ্ত এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা টম ডনোহই স্বয়ং এর ভিত্তিটি তুলে ধরেন। এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘সিআইএ এমন কিছুই করে না, যা অস্বীকারের ক্ষমতা তার নেই।’ 

সিআইএর ইতিহাস বলছে মার্কিন স্বার্থ ও আধিপত্য স্থাপন ও রক্ষায় বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রের জাল বিস্তারের জন্যই সংস্থাটির জন্ম। বহু দেশের সরকার উৎখাতের মুখ্য কারিগর হিসেবে কাজ করেছে সংস্থাটি। ১৯৫৩ সালে ইরানের নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে একনায়ক শাহ সরকারের পত্তন করেছিল সিআইএ।

পেছনে কাজ করেছিল জ্বালানি স্বার্থ, যা মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন নীতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে আছে আজও।  এ ছাড়া ১৯৫৪ সালে গুয়াতেমালা, ১৯৬০ সালে কঙ্গো, ১৯৬১ সালে ডোমিনিকান রিপাবলিক, ১৯৬৩ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম, ১৯৬৪ সালে ব্রাজিল ও ১৯৭৩ সালে চিলিতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করে নিজেদের পছন্দসই সরকার বসিয়েছিল সিআইএ। 

স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে জার্মান নাৎসি বিজ্ঞানীদের একটি দল নিয়োগ করে সিআইএ। আমেরিকা ও এর বাইরে ক্রিয়াশীল এ বিজ্ঞানী দলটির কাজ ছিল নাৎসি জার্মানির অধীনে তৈরি করা বিভিন্ন জৈবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রকে এক জোট করা। একই সঙ্গে এ ধরনের রাসায়নিক অস্ত্র প্রস্তুতেও গবেষণা চালানো। 

বহু বিস্তৃত এ প্রকল্পের আওতায়ই বিখ্যাত চন্দ্রাভিযান প্রকল্প করা হয়েছিল। এখানে উল্লেখ করা যায় ‘অপারেশন ক্যাওস’র কথা। বিশ্বব্যাপী কমিউনিস্ট আন্দোলন, কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার, নাগরিক অধিকার ও যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনগুলোর গলা টিপে ধরতে এ প্রকল্প নেওয়া হয়। ১৯৫০ ও ১৯৬০ এর দশক মূলত এ প্রকল্পের জন্য বিখ্যাত হলেও এখনো তা চলমান নিঃসন্দেহে। 

জন্মমুহূর্ত থেকেই সিআইএ সংবাদমাধ্যমের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করে। বিভিন্ন পরিকল্পনা অনুযায়ী নির্মিত তথ্য পরিবেশনই এর মূল কার্যক্রম।  সিআইএর রয়েছে মাদক প্রভাবিত তথ্য আদায়ের এক অভাবনীয় প্রকল্প। ১৯৫০ সালে এ প্রকল্প শুরু করে সংস্থাটি।

মানুষের মনের ওপর নিয়ন্ত্রণ স্থাপনের উচ্চাকাঙ্ক্ষী লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া এ প্রকল্প আক্ষরিকভাবে সাফল্য না পেলেও, সারা বিশ্বের মানুষের মনে বিশ্বপরিস্থিতি নিয়ে বিদ্যমান অনিশ্চয়তাবোধকে এর একটি পার্শ্ব উৎপাদ হিসেবে সহজেই চিহ্নিত করা যায়। 

আর রয়েছে সর্বসাম্প্রতিক উগ্রবাদীদের অস্ত্রীকরণের প্রকল্প। 

স্নায়ুযুদ্ধের সময় তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে জয়লাভের লক্ষ্যে আফগানিস্তানে যে প্রকল্প নিয়েছিল সিআইএ তাই এখন ফুলে ফেঁপে বিষফোড়া হয়ে সারা বিশ্ব ঘুরপাক খাচ্ছে। 

আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ওসামা বিন লাদেনের জন্ম খোদ সিআইএর হাতেই। তার হাতে শোভা পাওয়া অত্যাধুনিক অস্ত্রের উৎসও এ সিআইএ।হত্যা, গুপ্তহত্যা, যুদ্ধ ও ষড়যন্ত্র এ সবই লেগে আছে ৭৩ বছর বয়সী সিআইএর প্রতিটি অংশ।।

সর্বশেষ বলবো যে

সিআইএ যত নৃশংস্য , নিকৃষ্ট,ষড়যন্ত্রমূলক দু্র্ধর্ষ যত অভিযান অভিযান পরিচালনা করেছে সবকিছু আমেরিকার নিজের স্বার্থের জন্য। আমেরিকাকে সর্বশক্তিমান করার প্রয়াস। যা আমেরিকার রাজনৈতিক অবস্থান ,ক্ষমতা, নিরাপত্তাকে আরো শক্তিশালী করছে।

সিআইএ নিজের দেশের নিরাপত্তার,উন্নতির জন্য অন্য কারো ক্ষতি,নিরাপত্তা ইস্যু ভাবেন না।তারা এক হিংস্র প্রাণী। আমেরিকার নিরাপত্তার ভিত হয়ে দারিয়ে আছে পৃথীবীর বুকে।।

লেখকঃ মুহাম্মদ ইসমাইল হোসেন

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

তথ্য জানার জন্য সাহায্য নেওয়া হয়েছে:- 

1.spy stories book

2.spycraft:-the secret history of CIA

3.wikipedia/cia

4.roarbangla

5.Youtube