ফেলোশীপ বা টিচিং অ্যাসিস্টান্টশীপ ছাড়া ফান্ডের অন্য উৎস হলো প্রফেসরদের কাছ থেকে রিসার্চ অ্যাসিস্টান্টশীপ পাওয়া। প্রফেসরেরা সরকারী বেসরকারী নানা উৎস হতে গবেষণার জন্য অনুদান পেয়ে থাকেন, সেই প্রকল্পে কাজ করার জন্য ছাত্র দরকার তাদেরও। কাজেই অনেক সময় প্রফেসরদের হাত করা গেলে ফান্ড পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

দেশে থেকে সেটা কীভাবে করবেন? এখানেই আসছে সুলিখিত ইমেইলের ভূমিকা।

১) প্রফেসর সম্পর্কে জানুন ~ কোনো প্রফেসরকে ইমেইল করতে হলে শুরুতেই তার ওয়েবসাইট থেকে শুরু করে প্রকাশনার তালিকা, সব ঘেঁটে দেখুন। প্রফেসরের গবেষণা সম্পর্কে ভালো করে জেনে নিন। তারপর ভেবে দেখুন, আপনার পছন্দের কোন বিষয়ের সাথে সেটা মিলছে। এসব পড়াশোনা করে তারপর ঠিক করুন কী বিষয়ে আলোচনা করতে লিখবেন।

২) ইমেইলের শিরোনাম ও ধাঁচ ~ প্রথমেই আসা যাক, ইমেইলের শিরোনাম ও ধাঁচ নিয়ে। অধিকাংশ ভর্তিচ্ছু ছাত্ররা একটা বড় ভুল করে … ইমেইল করেই সরাসরি বলে, আপনার কাছ থেকে ফান্ড চাই, অথবা আপনার গ্রুপে ঢুকতে চাই। এরকম কয়েকশো ইমেইল প্রতিবছর একেকজন প্রফেসর পান। কাজেই টাকা দিন বললেই কাজ হবে, সেই আশা করাটা বাতুলতা মাত্র।

সেজন্য সরাসরি শুরুতেই ফান্ডের কথা না বলে বরং রিসার্চ নিয়ে বলা ভালো। প্রফেসরের গবেষণার এলাকা বা তাঁর কোনো গবেষণাপত্র নিয়ে প্রশ্ন করে শুরু করতে পারেন। কয়েকবার ইমেইল চালাচালি করে তারপর তার গ্রুপে ছাত্র নেয়া হবে কি না, সেটা তখন বলতে পারেন। আপনার মূল লক্ষ্য হবে যাকে ইমেইল পাঠাচ্ছেন, তার আস্থা অর্জন করা আর আপনাকে ছাত্র হিসাবে নিলে ভালো হবে, এই ধারণা দেয়া।

৩) ভাষা ও বানান ~ ইমেইলে আরেকটা বড় ভুল ছাত্ররা করে, তা হলো ইমেইল পাঠাবার সময়ে ভাষা ও বানানের দিকে খেয়াল না করা। কেবল বাংলাদেশ না, বিদেশের নানা জায়গার ছাত্ররাও এই কাজ করে।

আমি কোনো ছাত্রের ফান্ড না দিলেও কিছু ইমেইল পেয়েছি চীনা ছাত্রদের থেকে। এমন এক ছাত্র ইমেইল করলো, আমার সাথে কাজ করতে চায়, কিন্তু মেইলের ভিতরে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম লেখা, মানে কপিপেস্ট করে একই মেইল শখানেক জায়গায় পাঠিয়েছে। এভাবে ইমেইল করলে তা ধরে ফেলাটা খুব সহজ।

৪) প্রফেশনাল ইমেইল ঠিকানা ~ গুরুত্বপূর্ণ আরেকটা ব্যাপার বলি, অফিশিয়াল কাজে ব্যবহার করার জন্য একটা আলাদা ইমেইল খুলুন। অনেকেই “কুল” হওয়ার জন্য বিদঘুটে সব ইমেইল খুলে, যেমন কুলগাই২১২@জিমেইল, কিংবা সুইটগার্ল৫৪৪ ইত্যাদি। এধরণের ইমেইল থেকে মেইল পাঠালে সেই ছাত্র/ছাত্রীকে যে কারো পাত্তা দেয়ার সম্ভাবনা কম।

কাজেই আলাদা ইমেইল খুলুন নিজের নামে, সবচেয়ে ভালো হয় নিজের নামের প্রথমাংশ ডট শেষাংশ, এভাবে খুলতে পারলে। যেমন, আপনার নাম আবদুল করিম হলে আবদুল.করিম@জিমেইল, তা না পেলেও আবদুল.করিম৫@জিমেইল, এভাবে খুলতে পারেন। মেইল পাঠাবার আগে বানান খেয়াল করে নিন, ব্যকরণ ঠিক আছে নাকি দেখুন।

৫) ইমেইল ট্রাকিং করবেন না! ~ প্রফেসরেরা ইমেইল খুলবেন কি খুলবেন না সেটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নাই। অনেক সময়ে কেউ কেউ ইমেইলের ভিতরে নানা রকমের ট্রাকার কোড ভরে দেন যা দিয়ে প্রফেসর ইমেইল দেখেছেন কি না তা বোঝার চেষ্টা করা যায়।

প্রথমতঃ কাউকে এভাবে ট্রাক করা প্রচন্ড রকমের আন এথিকাল ব্যাপার।

দ্বিতীয়তঃ এটা অনেক ক্ষেত্রেই কাজ করে না এবং ইমেইলটাকে স্প্যাম হিসাবে চিহ্নিত করতে পারে। আর প্রফেসর ইমেইল দেখেছেন কি না তা দিয়ে কিছুই যায় আসে না, আগ্রহ ও দরকার থাকলে প্রফেসরেরা ইমেইল অবশ্যই দেখবেন, না থাকলে দেখবেনই না।

যদি ইমেইল করার পরে দুই সপ্তাহেও জবাব না পান, তাহলে বিনয়ের সাথে ফলো-আপ ইমেইল করুন। তাগাদা দিয়ে দুই দিন পর পর ইমেইল করলে ব্যস্ত প্রফেসরেরা বিরক্ত হবেন বটে।

৬) সঠিক সম্বোধন ~ সবশেষে খুবই দরকারী আরেকটা কথা যোগ করছি। প্রফেসরকে ঠিকভাবে সম্বোধন করুন ইমেইলের শুরুতে। ধরা যাক, প্রফেসরটির নাম হলো জন স্মিথ। আপনার সম্বোধন হওয়া উচিৎ প্রফেসর স্মিথ, বা ডক্টর স্মিথ। ভুলেও ডিয়ার জন বলে সম্বোধন করবেন না, কারণ ব্যক্তিগত পরিচিত ছাড়া অন্যদের ক্ষেত্রে ফার্স্ট নেইম ধরে সম্বোধন করাটা আমেরিকাতে অশিষ্ট আচরণ ধরা হয়। আবার ডক্টর জন বা প্রফেসর জন বলেও সম্বোধন করার রীতি নেই।

আর কেবল ডিয়ার স্মিথ বলে সম্বোধন করাটাও অনেকটা আপনার জুনিয়র কাউকে ইমেইল করছেন, সেরকম দেখায়। অধ্যাপিকাদের ইমেইল করার সময়ে মিস বা মিসেস না লিখে নিরাপদ হলো ডঃ অমুক লেখা। (আমার পিএইচডির এডভাইজর প্রফেসর মেরিঅ্যান উইন্সলেটকে একবার একজন মিসেস উইন্সলেট সম্বোধন করেছিলো।

উনি খুব ঠান্ডা গলায় বলেছিলেন, “The only Mrs. Winslett in my family is my mother”)। কাজেই সম্বোধন ঠিকভাবে করে তবেই ইমেইল শুরু করুন। (ব্যক্তিগতভাবে এই রকম ভুল সম্বোধনের অনেক ইমেইল পেয়েছি, এবং অনেক সময় সম্বোধন পড়েই ডিলিট ক্লিক করেছি, এমন ঘটনাও ঘটেছে।

“Hey Bro” টাইপের সম্বোধন প্রফেশনাল ক্ষেত্রে করা চলেনা, সেটা না বুঝলে সেই ছাত্রের ইমেইলের পরিণতি সরাসরি ডিলিটই হবে, তাই না? )।

লেখকঃ Ragib Hasan