লাদাখ এসেছি। আজকে বেড়িয়েছি থ্রি ইডিয়টসের রেঞ্চোর স্কুল সহ আরো কিছু প্লেস। এই স্কুলের প্রকৃত নাম ড্রুক পদ্মা কার্পো স্কুল।

রেঞ্চোর স্কুল। * ড্রুক পদ্মা কার্পো স্কুল।

রেঞ্চোর স্কুল। * ড্রুক পদ্মা কার্পো স্কুল।

তবে রেঞ্চোর স্কুলের নামের কাছে প্রকৃত নাম ঢাকা পড়েছে।

গতকাল কাশ্মীর থেকে ১৪ ঘন্টা জার্নি করে লাদাখ এসেছি। পুরো রাস্তাটাই যেমন ভয়ংকর তেমন সুন্দর ছিল। রুক্ষ পাহাড় বেয়ে রাস্তা কখনো উপরে উঠে গেছে কখনো নিচে। চারপাশের পরিবেশ নিজ চোখে বিশ্বাস হচ্ছিল না। কখনো মনে হচ্ছিল আমি সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখছি, কখনো মনে হচ্ছিল আমি নিজেই কম্পিউটার গেইমসের ভেতরে ঢুকে গেছি।

কাশ্মীর লাদাখ রোড

কাশ্মীর লাদাখ রোড

এখানে এসে তিব্বতের ফ্লেভার পাচ্ছি। বাড়ির ডিজাইন, খাবার সবই তিব্বত স্টাইলের। ইন্ডিয়ার ছিটেফোটাও নেই।

বর্ডারের ওপাশেই চায়নার তিব্বত। মানুষগুলোও মনে হয় তিব্বতের ভাষায় কথা বলে। এক ট্যুরে ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, তিব্বত সব দেখা হয়ে গেলো।

লাদাখের বাড়ি দেখতে তিব্বতের বাড়ির মত

লাদাখের বাড়ি দেখতে তিব্বতের বাড়ির মত

লাদাখের রাজধানী লেহ সিটি কাশ্মীরের রাজধানী শ্রীনগরের তুলনায় বেশ গোছানো। হোটেল থেকে শুরু করে সব কিছু ফিক্সড প্রাইস। তবে দাম সহনীয়।

পুরো লেহ সিটি

পুরো লেহ সিটি

দালালের দৌরাত্ম নেই এখানে। তবে এই সিজনেও অনেক ঠান্ডা। বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছি। আর সিটিটা পাহাড়ের উপরে হওয়ায় ৩ তলা বেয়ে উঠলে ১০ তলা ওঠার মতো হাপাতে হয়।

কাশ্মীর টু লাদাখ রুটে সাধারন ভাড়া গাড়ি প্রতি ২৬ হাজার রুপি। আমরা ১৩ হাজারে পেয়েছি। কারণ, গাড়িটি সুজুকির কারখানায় তৈরি হয়ে লাদাখ শোরুমে নেয়া হচ্ছিল বিক্রির জন্য।

লাদাখ

লাদাখ

আমরা যে ভাড়াটা দিয়েছি পুরোটাই ড্রাইভারের পকেটে। রাস্তায় গাড়ির তেল শেষ হয়ে গিয়েছিল। ড্রাইভার গাড়ির স্টার্ট বন্ধ করে পাহাড়ের উচুনিচু ঢালু ইউজ করে ১০ কিমি দূরে পেট্রোল পাম্পে এসেছে।

দু’পাশে বরফের পাহাড়গুলোকে মনে হয়েছে যেন কেউ সাদা কাগজে পেন্সিল দিয়ে এঁকে রেখেছে। ভয়ংকর সুন্দর।

লাদাখে স্নো ফল

লাদাখে স্নো ফল

কাশ্মীর-লাদাখ রোডে মুনল্যান্ড নামে একটা জায়গা আছে। এখানকার মাটির কার্ভ দেখতে একদম চাঁদের পৃষ্ঠের মতো তাইই এর নাম মুনল্যান্ড।

মুনল্যান্ড। চাঁদের পৃষ্ঠ নাকি দেখতে এমন।

মুনল্যান্ড। চাঁদের পৃষ্ঠ নাকি দেখতে এমন।

ম্যাগনেটিক হিল নামে আরেকটা জায়গা আছে। যেখানে পানির বোতল রেখে দিলে গড়িয়ে উপরের দিকে উঠে যায়।

একটা নদী আছে যেখানে একপাশের পানি ইন্ডিয়ার অংশের অন্য পাশের পানি আসে পাকিস্তান থেকে। দুই পানির কালার ভিন্ন। কেউ কারো সাথে মিলে না। পানিও ভারত পাকিস্তান বুঝে :p

কোন কোন পাহাড়ের উচ্চতা ৪ কিমি পর্যন্ত। উপরে প্রচন্ড বাতাস। মনে গাড়ি সহ পাহাড় থেকে ফেলে দেবে। উপরে এয়ার প্রেসার এতই কম যে আমাদের সাথে থাকা চিপসের প্যাকেট বিকট শব্দে নিজে নিজে ফুটে গেছে।

বুঝেন অবস্থা। ভাগ্যিস আমি ফুটে যাইনি। তাহলে আমার দুই বন্ধু যে ভয়টা পেতো, ভাবতেই হাসি পাচ্ছে 😀 ।

নিজে নিজে ফুটে যাওয়া চিপসের প্যাকেট। এটার কারণ হলো, সমতলে বাতাসের একটা চাপ থাকে। কিন্তু পাহাড়ে চাপ অনেক কম। তাই প্যাকেটের ভেতরে থাকা বাতাস বাইরে চাপ দেয়ার শক্তিটা বেশি পায়।

নিজে নিজে ফুটে যাওয়া চিপসের প্যাকেট। এটার কারণ হলো, সমতলে বাতাসের একটা চাপ থাকে। কিন্তু পাহাড়ে চাপ অনেক কম। তাই প্যাকেটের ভেতরে থাকা বাতাস বাইরে চাপ দেয়ার শক্তিটা বেশি পায়।

লাদাখ আসার প্রিপারেশন হিসেবে ৪৮ ঘন্টা আগে থেকে ডায়ামক্স নামের টেবলেট খাচ্ছি। সাথে পেয়াজ, আদা, রসুন নিয়ে নিয়েছি। হাইএলটিটিউডে নিশ্বাসে সমস্যা হলে এগুলো খেতে হয়।

অনেকে হয়তো ভাবছেন, প্লেনে আসলেইতো ঝামেলা শেষ। প্লেনে সরাসরি লাদাখ গেলে অসুস্থ হবার চান্স অনেক বেশি।

সরাসরি গেলে দুই দিন শুয়ে বসে থেকে শরীরকে এডজাস্ট করতে হয়। আর কাশ্মীর হয়ে গেলে কিছুটা আগেই এডজাস্ট হয়ে যায়।

আসার পথে অনেকগুলো স্পটে থেমেছি। কার্গিল নামে একটা জায়গা আছে। ভারত পাকিস্তানের মেইন যুদ্ধটাই এখানে। ১৯৯৯ সালে ৫শর বেশি ইন্ডিয়ান আর্মি এখানে মারা গেছে। যুদ্ধ এখনো থামেনি। প্রতি বছরই হয়।

এখানে একটি মিউজিয়াম আছে। যেখানে মৃত সৈন্যদের লাশের ছাই রাখা আছে, যুদ্ধে ব্যবহৃত অস্ত্র আছে। মিউজিয়ামের এক পাশে পাকিস্তানের পতাকা উল্টো করে দেয়ালে সাটিয়ে রাখা হয়েছে।

কার্গিল মেমোরিয়াল

কার্গিল মেমোরিয়াল

নিচে লিখেছে, শত্রুর পতাকা উল্টো করে রাখা হলো। তখন আমি ভাবলাম, আমাদের পতাকা কেউ উল্টো করে রাখতে গেলে কি অবস্থাটা হবে। আমাদেরটা উল্টো যেমন সোজাও তেমন 😀 । কার্গিল মেমোরিয়ালে একটু পরপর ১০ মিনিটের একটা শো হয়। যুদ্ধের ডকুমেন্টারি শো।

কার্গিল মেমোরিয়াল

কার্গিল মেমোরিয়াল

আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকেও সেই ডকুমেন্টারিতে দেখানো হয়।

লাদাখের মেইন পয়েন্টগুলো বাংলাদেশীদের জন্য নিষিদ্ধ। আমাদের প্যাংগং লেক, নুবরা ভ্যালি যাবার প্ল্যান ছিল। এখানকার ডিসি অফিস থেকে পারমিশন দিলে যাওয়ার চান্স ছিল।

হোটেলের ছাদ

হোটেলের ছাদ

কিন্তু আজকে বুদ্ধ পূর্ণিমায় সব বন্ধ। তাই লাদাখের হোটেলে দুদিন শুয়ে বসে থেকে শরীর এডজাস্ট করে বাংলাদেশ চলে আসব 😀

হোটেল ভিউ। ওই যে দূরে মেঘলা আকাশ, নিচে বরফের পাহাড়।

হোটেল ভিউ। ওই যে দূরে মেঘলা আকাশ, নিচে বরফের পাহাড়।

কাশ্মীর মুসলিম হলেও লাদাখ বৌদ্ধ অধ্যুষিত এলাকা। কিন্তু সিটির মাঝে বিশাল এবং অনেক সুন্দর একটি মসজিদ আছে।

লাদাখের রাজধানী লেহ সিটিতে বিশাল দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।

লাদাখের রাজধানী লেহ সিটিতে বিশাল দৃষ্টিনন্দন মসজিদ।

 

All is well

All is well

বুঝলাম না টং করে উঠল কেন 😛

বুঝলাম না টং করে উঠল কেন 😛

I Love Leh

I Love Leh

৪ কিমি পাহাড়ের উপরে বৌদ্ধরা মান্নত করে কাপড় লাগিয়েছে।

৪ কিমি পাহাড়ের উপরে বৌদ্ধরা মান্নত করে কাপড় লাগিয়েছে।

সোনমার্গ। বরফের (গ্লেসিয়র) উপর ওই যে পিপিলিকাগুলো দেখা যাচ্ছে ওগুলো হলো স্নো মবিল গাড়ি। ট্যুরিস্টরা এই গাড়িতে চড়ে বরফ বেয়ে পাহাড়ে উঠে।

সোনমার্গ। বরফের (গ্লেসিয়র) উপর ওই যে পিপিলিকাগুলো দেখা যাচ্ছে ওগুলো হলো স্নো মবিল গাড়ি। ট্যুরিস্টরা এই গাড়িতে চড়ে বরফ বেয়ে পাহাড়ে উঠে।

লাদাখ

লাদাখ

লাদাখ

লাদাখ

লাদাখ

লাদাখ

 

হোটেলের ছাদে সোলার গিজার

হোটেলের ছাদে সোলার গিজার

লাদাখের রুক্ষতা

লাদাখের রুক্ষতা

রেঞ্চোর স্কুলে সবচেয়ে যেটা ভালো লেগেছে, ঢুকতে কোন টিকেট লাগে না। অথচ ৫০০ রুপি টিকেট হলেও পর্যটক আসতো।
তবে স্কুল বিল্ডিং এড়িয়ায় পর্যটক ঢুকতে দেয়া হয় না। যেন স্টুডেন্টদের পড়াশুনায় ব্যত্যয় না ঘটে।
শুধু যে অংশটুকুতে স্যুটিং হয়েছে সেটুকু পর্যটকদের জন্য খোলা। অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে রেখেছে।
একটা কফিশপ আছে উন্নত মানের।
ওয়াশরুমের সামনে একটা বক্স দেয়া যেখানে লিখা ওয়াশরুম ইউজের পর যেন ১০ রুপি রাখা হয়। অথচ কোন মানুষ নেই। মানুষ চাইলেই টাকা না দিয়ে চলে যেতে পারে। কিন্তু কাউকেই সেটা করতে দেখলাম না। আমি এতটাই মুগ্ধ যে আমার পকেট থেকে আপনা আপনিই ১০ টাকা চলে এলো।

 

কার্গিল মেমোরিয়াল

কার্গিল মেমোরিয়াল

আরেকটা কথা বলা হয় নি। কাশ্মীর এলাকায় বাংলাদেশের আগে সাকিব আল হাসানকে চেনে। যদি বলি বাংলাদেশ থেকে এসেছি তখন বলে, ও ওটাতো সাকিব আল হাসানের দেশ।

লেখক: এস এম নাহিদুর রহমান
সিইও,
র‍্যাফিড আইটি।

ছবিতে: লেখক ও তার বন্ধুরা