গবেষণা করতে চান?

ঠিক আছে। খুবই ভালো কথা। তাহলে শুরুতেই জানা দরকার আপনার কী কী লাগবে। কোমর বেঁধে গবেষণা করতে নামার আগে একটু যদি প্রস্তুতি নিতে পারেন ভালো করে, তাহলে ভালো করে গবেষণা করতে পারবেন।

নোটবুক

আজকাল সবাই সবকিছু ডিজিটাল করতে চায়। ট্যাবলেট বা ল্যাপটপ বা ফোনে টুকে নিতে চায় সবকিছু। কিন্তু আমার পরামর্শ হল গবেষণার জন্য একটা কাগজের নোটবুক ব্যবহার করা। কারণ হলো বেশ কয়েকটা — নোটবুক খুব লো-টেক জিনিষ হলেও ব্যাটারি/চার্জ শেষ হবার সম্ভাবনা নাই, অথবা হ্যাক হয়ে বা ভাইরাস ধরে রিসার্চ হারাবার আশংকা নাই। ইন্টারনেট কানেকশনও লাগবে না।

গবেষণার জন্য একেবারে শুরুতেই তাই একটা ভালো নোটবুক জোগাড় করে নিন। হার্ড কাভারের হলে ভালো হয়। তাই বলে চামড়ায় বাঁধানো টাইপের অনেক দামী লাগবে এমন না — মোটামুটিভাবে ২০০-৩০০ পৃষ্ঠার নোটবুক জোগাড় করুন। প্রথম ৪/৫ পৃষ্ঠা খালি রাখুন, যাতে করে সেখানে সূচীপত্র বা অন্যান্য তথ্য লিখে রাখতে পারেন।

নোট নিবেন কীভাবে ও কেন?

নোট নিবেন হাতে কলমে। প্রতিদিনের জন্য আলাদা পৃষ্ঠা ব্যবহার করবেন। তারিখ লিখে শুরু করবেন। মাথায় আইডিয়া যখনই আসবে, চট করে লিখে ফেলবেন সেই পাতায়। দরকার হলে ছবিও।

কথা হলো — এই আধুনিক যুগে হাতে কলমে লিখতে বলছি কেন? সারাদিন টাইপ তো কম করেন না, তাহলে লিখতে বলছি কেন? এর কারণটা হল হাতে লিখতে টাইপের চাইতে সময় একটু বেশি লাগে, ফলে আপনার পক্ষে তথ্যগুলো প্রসেস করা সহজ হয়। লিখতে লিখতে চিন্তা করে লিখতে পারেন। নানা গবেষণায় দেখা গেছে, হাতে লিখে নোট নেয়ার ক্ষেত্রে সেটা অনেক ভাল করে মনে থাকে, টাইপ করে সেটা হয় না।

আরো অন্য সুবিধা হল ইচ্ছা মত লেখা যায়, লেখার মধ্যে ছবি জুড়ে দেয়া যায় দরকার হলে। কোন কিছু নিয়ে ব্রেইনস্টর্মিং এর জন্য এই স্বাধীনতাটা দরকার। কিছু নোট টেকিং টুল যেমন ওয়াননোট বা এভারনোটে এই কাজটা কম্পিউটারে বা ট্যাবলেটেও করা যায় বটে, তবে সেটা খাজনার চাইতে বাজনা বেশির মত অবস্থা, মানে একই কাজ অনেক সহজে খাতা কলমে করা যায়।

কম্পিউটারের নানা সফটওয়ার

নোটবুকের কথা বলেছি, তাই বলে কি সফটওয়ার ব্যবহারে মানা করবো? মোটেও না। বরং গবেষণার জন্য কিছু সফটওয়ার অপরিহার্য। বিশেষ করে লিটারেচার রিভিউ করার জন্য কিছু জিনিষ খুব কাজে আসে।

নোট-টেকার

প্রথমেই আসে মাইক্রোসফটের ওয়ান নোট (OneNote) অথবা আরেকটি কোম্পানির এভারনোট (EverNote) এর কথা। ধরা যাক, আপনি গবেষণা করতে চান ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের উপরে। নানা জায়গায় এই বিষয়ে কী কী কাজ হয়েছে তা খুঁজছেন। কিছু পেলেন রিসার্চ পেপার, কিছু পেলেন নিউজ রিপোর্ট অথবা অন্য ডকুমেন্ট।

সবগুলোকে এক জায়গায় একই টুলের অধীনে জড় করে রাখাটা বেশ কষ্টের। এই ক্ষেত্রে কাজে আসে এই নোট টুলগুলো। যেখানে যা পাবেন, সেগুলোকে একটা বাটন চেপেই জমা করে রাখতে পারেন নোটবুকে। (আমি ব্যক্তিগতভাবে রিসার্চ লিটারেচার রিভিউ করার সময়ে ওয়াননোট ব্যবহার করি।)

রেফারেন্স ম্যানেজার

উপরের নোটটেকার টুলগুলো দিয়ে যা জড় করলেন, সেখান থেকে অনেক কিছু আপনার কাজে লাগবে, সাইট করতে হবে আপনার পেপারে। কাজেই সেই সাইটেশন ম্যানেজমেন্টের জন্য রেফারেন্স ম্যানেজার বা সাইটেশন ম্যানেজার টুল ব্যবহার করতে পারেন। এরকম বেশ কিছু ভাল টুল এর মধ্যে আছে EndNote, Mendeley, Zotero, BibSonomy ইত্যাদি।

পেপার লেখার টুল

গবেষণার ফলাফল লেখার জন্য ব্যবহার করতে হবে ওয়ার্ড প্রসেসিং বা টাইপসেটিং এর কোনো টুল। সবচেয়ে ভাল হয়, আমার ব্যক্তিগত মতে, যদি LaTeX শিখে নিতে পারেন। বিশেষ করে কম্পিউটার সাইন্স বা প্রকৌশলের/পদার্থবিদ্যার নানা শাখায় কিংবা গণিতের উপরে কাজ করলে এইটার মতো ভালো সিস্টেম আর নাই।

তবে এটা শেখাটা বেশ কঠিন। অনলাইনে LaTeX এডিটর আছে বেশ সহজে শেখার মত — যেমন Overleaf — এরকম কিছু দিয়ে শুরু করতে পারেন। LaTeX এর সুবিধা অনেক, তবে সেটা দরকার না হলে মাইক্রোসফট ওয়ার্ড দিয়েও পেপার লেখা যায়। তবে রেফারেন্স ম্যানেজ করা বা পছন্দমত জায়গায় ছবি বসানো অনেক কষ্টকর। (নানা কারণে কম্পিউটার বিজ্ঞানীরা LaTeX পছন্দ করেন — অন্যান্য বিষয়ের বিজ্ঞানীরা অবশ্য ওয়ার্ডেই কাজ করেন দেখেছি, কাজেই ওয়ার্ড ব্যবহার করলে খুব একটা সমস্যা হবে না।)

অনলাইন এডিটর

পেপার লেখার কাজটা অনলাইন এডিটরে করলে অনেক সুবিধা হয়। LaTeX এর জন্য আমি Overleaf ব্যবহার করি। যারা ডক ফরম্যাটে লিখবেন তারা গুগল ডক বা অফিস৩৬৫ ব্যবহার করতে পারেন।

Writer: Ragib Hasan
Associate Professor at UAB – The University

রিসার্চ এবং পেপার রাইটিং নিয়ে অনুশীলন একাডেমি এবং JBRATRC আয়োজন করেছে মাস্টার কোর্স। এনরোল করতে এই লিংকে ভিজিট করুন।