দেশের বর্তমান ইন্সটল্‌ড ক্যাপাসিটি ১৬,০০০ মেগাওয়াট। ডিমান্ড যে হারে বাড়ছে তাতে করে ২০৩০ সাল নাগাদ প্রায় ৩৪,০০০ মেগা ওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন হবে। এত বড় ঘাটতি কিভাবে মিটাবে? কারো মনে কখনো প্রশ্ন জাগে নি?

“কেন? আমাদের দেশ না গ্যাসের উপরে ভাসছে! গ্যাস দিয়েই তো সব মিটানো যায়।” আপনি যদি এমনটি ভেবে থাকেন তবে এই রিপোর্ট আপনার জন্য।

এতদিন ধরে তাই করে আসছে। দেশের মোট জেনারেটেড পাওয়ারের প্রায় ৬০% আসে ন্যাচারাল গ্যাস থেকে।

২০১১ সালের এক রিপোর্ট অনুযায়ী যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ আছে তা দিয়ে প্রায় ১৬ বছর পরে গ্যাস শেষ হবার কথা। মানে আর প্রায় ৯/১০ বছর আমরা গ্যাসের উপরে ভেসে থাকবো নতুন কূপের সন্ধান পাওয়া না গেলে। এরপরে?

অনেকেই বলবেন রিনিওয়েবল আছে না। আপনি যদি মনে করেন সোলার, উইন্ড, হাইড্রো দিয়ে এত বড় চাহিদা মিটাবেন তাহলেও এই রিপোর্ট আপনার জন্য। এতদিনেও সোলার থেকে আমরা পাই মাত্র ১৫ মেগাওয়াট।

কুতুবদিয়ার উইন্ড পাওয়ার থেকে পাই মাত্র ১.৯ মেগাওয়াট। সোলারে বিশাল জায়গা দরকার আর উইন্ড পাওয়ারের ক্ষেত্রে উইন্ড ভেলোসিটি বিশাল একটা ফ্যাক্টর। হাইড্রোর পসিবিলিটি দেশে আর নেই বললেই চলে।

আপনি চাইলেই কোন একটা নদীতে বাঁধ দিয়ে সেখান থেকে পানির হেড ক্রিয়েট করতে পারেন না। এর জন্যে আপস্ট্রিমে থাকা জন বসতির কথাও মাথায় রাখতে হয়।

কাপ্তাইয়ে যেটা সম্ভব হয়েছে তার কারণ হলো আপস্ট্রিমে দুপাশ পাহাড়ে ঘেরা। undoubtedly রিনিওয়েবল এনার্জি বেস্ট।

কিন্তু আপনি চাইলেও রিনিওয়েবল দিয়ে হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারবেন না। তাহলে আর বাকী থাকলো কি?

নিউক্লিয়ার!!!

নিউক্লিয়ারের কথা বলে ঝামেলায় পড়ে গেলাম। এখন আপনি ঘুরেফিরে থ্রি মাইল আইল্যান্ড, চেরনোবিল, ফুকুশিমা এই তিনটা ঘটনা নিয়ে আসার চেষ্টা করবেন।

এসব ঘটনার পরে কিছু দেশ নিউক্লিয়ার থেকে সরে আসার প্রস্তুতি গ্রহণ করে। তার একটা হলো জার্মানী।

এই জার্মানী আবার বিদ্যুৎ আমদানি করে ফ্রান্স থেকে যাদের কিনা ৭০% পাওয়ার প্রডিউস হয় নিউক্লিয়ার এনার্জি থেকে। জার্মানির টাকা আছে তারা এই বিলাসিতা করতে পারে। আমরা পারিনা।

২০১১ সালে ফুকুশিমা দুর্ঘটনার পরে জাপান নিউক্লিয়ার থেকে সরে আসে পুরোপুরিভাবে। কিন্তু সময়ের সাথে তারা পুনরায় চালু করতে থাকে বিভিন্ন ইউনিট।

বর্তমানে ৯ ইউনিট চালু আছে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ মোট পাওয়ারের ২০-২২% নিউক্লিয়ার এনার্জি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। এর জন্য তাদের ৩০ টা ইউনিট দরকার পড়বে।

বর্তমানে আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, স্পেন, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, ফিনল্যান্ড, ফ্রান্স, হাঙ্গেরি, ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভারত, পাকিস্থান সহ প্রায় একত্রিশটা দেশ নিউক্লিয়ার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে।

বিশ্বে বর্তমানে ৪৫০ এর বেশি রিয়েক্টর চালু আছে। ১৫ টা দেশে প্রায় ৫০ টা রিয়েক্টর কন্সট্রাকশনের কাজ চলছে।

এত দেশ নিউক্লিয়ার রিয়েক্টর বানাচ্ছে। এত এত ধরণ আছে। আমাদের যেটা হচ্ছে এটা কেমন? We’re building one of the most safest reactors in the world, VVER-1200/V-392M.

রেডিয়েশন! শুনলেই কেমন জানি ভয় লাগে। নিউক্লিয়ার রিয়েকশন হবে আর রেডিয়েশন থাকবে না তা কিভাবে সম্ভব?

কিন্তু এই রেডিয়েশন আটকানোর জন্য থাকবে চার স্তরের ব্যারিয়ার। এর পরেও কিছু বাইরে আসবেই যেটা খুবই নগণ্য।

প্লান্টে যারা কাজ করবে সবার ইয়ার্লি একটা ডোজ লিমিট আছে। IAEA এর নিয়ম মতে, কেউ চাইলেও বেশি ডোজ নিতে পারবে না।

কনভেনশনাল পাওয়ার প্লান্ট গুলোর মতো CO2 নির্গত না হওয়ায় এটা মোটামুটি বেশ ইনভায়রনমেন্ট ফ্রেন্ডলি যদি কোন বড় ইন্সিডেন্ট না হয়। ইভেন ইন্সিডেন্ট হলেও রিয়েক্টিভ ম্যাটেরিয়াল যেন বাইরে যেতে না পারে সে জন্য আছে কোর ক্যাচার।

রূপপূরের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। এর মধ্যে বরিশালে পরবর্তী প্লান্টের জন্য সাইট সিলেকশনের কাজ চলছে। এত এত দেশ নিউক্লিয়ার থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারলে ইনশাআল্লাহ আমরাও পারবো।

Writer: Borhan Uddin Chowdhury

Mechanical Engineer At Nuclear Power Plant Company of Bangladesh