কামাল, জামাল ও মফিজ তিন ক্লাসমেট।

ভার্সিটিতে ঢুকেই কামাল কনটেস্ট প্রোগ্রামিং করা শুরু করে। শুরুতে খুব বেশি ভালো না পারলেও তার প্রবলেম সলভিং করতে বেশ ভালো লাগে।

একবার ব্লু কোডার হওয়ার পর থেকে তার প্রোগ্রামিংয়ের নেশা পেয়ে যায়। সে রেড কোডার হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করে আর দিনরাত কোডিং করতে থাকে। পরীক্ষার আগের রাতেও প্রবলেম সলভ করে সাবমিট করে।

সারাদিন প্রোগ্রামিং করতে করতে তার আর সিজির চিন্তা থাকে না। রেজাল্ট খারাপ হয় কিন্তু তারপরও সে কনটেস্ট করতেই থাকে। রেড কোডার হতে না পারলেও ভার্সিটির শেষ করে সে পারপল কোডার হয়ে।

জামালের শুরু থেকেই ডেভেলপমেন্টের কাজ বেশ ভাল লাগত। দ্বিতীয় সেমিস্টারের থাকতেই সে তার প্রথম ওয়েবসাইটটি বানায়। এরপর এটার একটা নেশা পেয়ে যায়।

কাজ করতে করতে একপর্যায়ে তার স্কিল অনেক বেড়ে যায়। দুইটা স্টার্টাপের হয়েও কাজ করা শুরু করে সে। পরীক্ষার আগের রাতেও দেখা যায় সে তার ওয়েবসাইট নিয়ে কাজ করছে। ফলাফল, রেজাল্ট খারাপ হয়।

ফাইনাল ইয়ারে এসে সে নিজেরই একটা স্টার্টআপ দিয়ে দেয়।

এবার আসি মফিজের কথায়। মফিজের ধারণা ভার্সিটি লাইফটা ইনজয় করার, এত প্যারা নিয়ে কি হবে। সে সারারাত জেগে গেম খেলে, বিভিন্ন সিরিজ দেখে। ট্যুরের টাকা জমানোর জন্য টিউশনি করে এবং সেই টাকা দিয়ে পিএল এ ট্যুর দেয়।

ঘুম থেকে উঠতে পারে না বলে সিটি মিস দেয়। কন্টেস্ট, ডেভেলপমেন্ট বা বিজনেস কম্পিটিশনের এর প্রতি তার তেমন আগ্রহ নেই। পরীক্ষার তিন দিন আগে পড়া শুরু করে এবং যথারীতি পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়।

পাস করার তিন বছর পর দেখা গেল কামাল গুগলে জব করে আর জামাল এই দেশে একটা বিশাল সফটওয়্যার কোম্পানি দাড়া করে ফেলেছে।

সাংবাদিক তাদের সফলতার গল্প ফিচার করার জন্য তাদের ইন্টারভিউ নিতে আসে এবং ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করে “ভাই আপনার সিজি কত ছিল?”। তারা ইতস্তত করে বলে, ” আমাদের সিজি তো অনেক কম, মাত্র দু পয়েন্ট সামথিং”।

সাংবাদিক তাদের ফিচারে হেডলাইন করে “কম সিজি নিয়েও আজ একজন গুগলে আর আরেকজন তরুণ উদ্যোক্তা “।

আর এই পোস্ট দেখে মোটিভেশন পায় একদল মফিজ। বীরদর্পে তারা এই পোস্ট শেয়ার করে আর ক্যাপশন দেয় “সিজি ডাজন্ট ম্যাটার “। এরপর আবার সিরিজ দেখা শুরু করে দেয়।

সিজি কম এটা কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কিন্তু কেন সিজি কম এটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ।

লেখক- খন্দকার মুশফিকুর রহমান
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার – চালডাল
এক্স- সিএসই, বুয়েট